রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত | (রমজানের ৩০ দিনের ৩০টি ফজিলত)

রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত - রমজানের ৩০ দিনের ৩০টি ফজিলত
Written by IQRA Bari

রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত : ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের তৃতীয় স্তম্ভের নাম রোজা। ইসলামী শরীয়তে কিছু রোজা বাধ্যতামূলক এবং কিছু রোজা বাধ্যতামূলত নয়। রমজানের রোজা প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ। রমজান হলো ইসলামি বর্ষপঞ্জির ৯ম মাস। এই মাস পুরোটা জুড়েই রোজা রাখতে হয়।

রোজা হলো ঢাল স্বরূপ। পাপ থেকে বেঁচে থাকার খুবই কার্যকরী একটি আমলের নাম রোজা। রোজা মানুষকে জাহান্নাম থেকেও বাঁচাবে। রোজার ফজিলতের কথা কুরআন -হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনের সূরা বারাকায় মহান আল্লাহ বলেন, রমজান হলো এমন একটি মহিমান্বিত মাস, এই মাসে মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল করা হয়েছে। সূরা ক্বদরে আল্লাহ বলেন, রমজানে ক্বদর নামে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।

হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, “রোজা কেবলই আমার জন্য, অতএব এর প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব। অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ছওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার জীবনের সমস্ত গোনাহ মহান আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন।

আরও পড়ুনঃ নামাজে রাকাত ভুলে গেলে করণীয় কি?

হাদিসে আরও বর্ণিত আছে, রমজান মাসে বান্দার প্রতিটি আমলের ছওয়াব দশগুণ হতে সত্তরগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। অন্য হাদিসে, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বরের চেয়েও প্রিয়। হাদিসে আরও বর্ণানা আছে যে, রোজা ধৈর্যের অর্ধাংশ এবং ধৈর্য ঈমানের অর্ধাংশ।

রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত সম্পর্কে সহিহ সনদে এমন আরও বহু হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায়।

রমজানের ৩০ দিনের ৩০টি ফজিলত

৩০ রমজানের প্রতিদিনের আলাদা আলাদা ফজিলতের কথা হাদিসের সূত্রে বর্ণনা পাওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সহিহ সনদের হাদিস গুলোকে এড়িয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে মনগড়া কিছু বর্ণনা সোশ্যাল প্লাটফর্ম গুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে শেয়ার করে একটি বিভ্রান্তকর অবস্থা তৈরি করে ফেলেছে।

ফলে সাধারণ মুসলমানদের অনেকেই সূত্রহীন বিভ্রান্তকর কথাগুলোকে বিশ্বাস করে আমলে পরিণত করেছে। যা একটি সুস্পষ্ট বিদআদ। কোনো কথাকে রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস বলে চালিয়ে দেওয়ার মানে এই যে, রাসূল (সা.) তিনি তাঁর নবুয়্যতের কাজ যথাযথ পালন করেননি, এজন্য তারা নিজেদের থেকে বানিয়ে কিছু কথা রাসূল (সা.) এর নামে চালিয়ে দিচ্ছেন! নায়ুযুবিল্লাহ!

আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত

তারা রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত গুলো গুলোতে যেভাবে প্রকাশ করে তার একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো। আপনারা অবশ্যই এই ধরণের কথা গুলোকে সম্পূর্ণ রূপে এড়িয়ে চলবেন এবং সাধারণ মুসলমানদেরকে সচেতন করবেন।

১ম রোজার ফজিলত

রোজাদারকে নবজাতকের মত নিষ্পাপ করে দেওয়া হয়।

২য় রোজার ফজিলত

রোজাদারের মা -বাবাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

৩য় রোজার ফজিলত

একজন ফেরেশতা আবারও রোজাদারের জন্য ক্ষমার ঘোষনা দেয়।

৪র্থ রোজার ফজিলত

রোজাদারকে আসমানি বড় বড় চার কিতাবের বর্ণমালা সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়।

৫ম রোজার ফজিলত

মক্কা নগরীর মসজিদে হারামে নামাজ আদায়ের সাওয়াব প্রদান করা হয়।

আরও পড়ুনঃ নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি?

৬ষ্ঠ রোজার ফজিলত

ফেরেশতাদের সাথে সপ্তম আকাশে অবস্থিত বাইতুল মামূর তাওয়াফের সাওয়াব প্রদান করা হয়।

৭ম রোজার ফজিলত

ফিরাউনের বিরুদ্ধে হযরত মূসা (আ.) এর পক্ষে সহযোগিতা করার সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়।

৮ম রোজার ফজিলত

রোজাদারের উপর হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর মতো রহমত বর্ষিত হয়।

৯ম রোজার ফজিলত

নবী-রাসূলগণের সাথে দাঁড়িয়ে ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হয়।

১০ম রোজার ফজিলত

রোজাদারকে উভয় জাহান অর্থাৎ দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করা হয়।

১১ তম রোজার ফজিলত

রোজাদারের মৃত্যুটা নবজাতকের ন্যায় নিষ্পাপ বলে নিশ্চিত হয়।

১২ তম রোজার ফজিলত

হাশরের ময়দানে রোজাদারের চেহারা পূর্ণিমা চাদের মতো উজ্জল করা হবে।

আরও পড়ুনঃ সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম কানুন (A-Z বিস্তারিত)

১৩ তম রোজার ফজিলত

হাশরের ময়দানের সকল বিপদ থেকে রোজাদারকে নিরাপদ করা হবে।

১৪ তম রোজার ফজিলত

হাশরের ময়দানে রোজাদারের হিসাব- নিকাশ সহজ করা হবে।

১৫ রোজার ফজিলত

সমস্ত ফেরেশতাগণ রোজাদারের জন্য দোয়া করে।

১৬ তম রোজার ফজিলত

মহান আল্লাহ তা’আলা রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করেন ।

১৭ তম রোজার ফজিলত

একদিনের জন্য নবীগণের সমান সাওয়াব প্রদান করা হবে।

১৮ রোজার ফজিলত

রোজাদার এবং তার মা-বাবার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির সংবাদ দেওয়া হয়।

১৯ তম রোজার ফজিলত

পৃথিবীর সকল পাথর-কংকর টিলা- টংকর রোজাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে।

আরও পড়ুনঃ নামাজের নিষিদ্ধ সময় কেন? নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ পড়লে কি হয়?

২০ তম রোজার ফজিলত

আল্লাহর রাস্তায় জীবন দানকারী শহীদের সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়।

২১ তম রোজার ফজিলত

রোজাদারের জন্য জান্নাতে একটি উজ্জল প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়।

২২ তম রোজার ফজিলত

হাশরের ময়দানের সকল চিন্তা থেকে রোজাদারকে মুক্ত করা হয়।

২৩ তম রোজার ফজিলত

জান্নাতে রোজাদারের জন্য একটি শহর নির্মাণ করা হয়।

২৪ তম রোজার ফজিলত

রোজাদারের যে কোন ২৪টি দোয়া কবুল করা হয়।

২৫ তম রোজার ফজিলত

রোজাদারের কবরের শাস্তি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২৬ তম রোজার ফজিলত

রোজাোরকে ৪০ বছর ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হয়।

আরও পড়ুনঃ নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?

২৭ তম রোজার ফজিলত

রোজাদারকে চোখের পলকে পুলসিরাত পার করে দেওয়া হয়।

২৮ তম রোজার ফজিলত

রোজাদারের জন্য জান্নাতের নেয়ামত দ্বিগুন করা হয়।

২৯ তম রোজার ফজিলত

রোজাদারকে এক হাজার কবুল হজ্জের সাওয়াব প্রদান করা হয়।

৩০ তম রোজার ফজিলত

রোজাদারের জন্য পুরা রমজানের ফজিলত দ্বিগুন।

আরও পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, ফজিলত ও সময়

রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত ও কিছু কথাঃ

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত গুলো যদিও শুনতে অনেক ভালো মনে হয়, কিন্তু এভাবে কোনো হাদিসে বর্ণনা পাওয়া যায় না। যদিও তারা কিছু কিছু কথা বিভিন্ন হাদিস থেকেই নিয়েছে, তবে রমজানের অমুক তারিখের জন্য অমুক ফজিলত এমন বর্ণনা নেই।

রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত দলিল সহ কেউ আপনাকে দেখাতে পারবেন না। জাল হাদিসেও এভাবে কোনো রেফারেন্স নেই। সুতরাং, এগুলো কোনো ব্যক্তির দ্বারা বানোয়াট বর্ণনা। যিনি এগুলোকে রাসূল (সা.) এর হাদিস বলে চালিয়ে দিয়েছেন, তিনি বুঝে শুনেই হাদিসকে হেয় করার জন্য করেছেন নাকি অসচেতন অবস্থায় করেছেন তা আমরা জানি না।

সুস্পষ্টভাবে জেনে রাখুন, ভিত্তিহীন ভাবে কোনো কথাকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর চাপিয়ে দেওয়া অপবাদের শামিল! এর শাস্তি অনেক ভয়াবহ ও কঠোর হবে। মহান আল্লাহ আমাকে এবং আমাদের সবাইকে এর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!