শরীয়তের দৃষ্টিতে নামাজ প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানদের জন্যই ফরজ, অর্থাৎ আবশ্যক। নামাজ পড়ার মধ্যেও আরো কিছু ফরজ রয়েছে, সেগুলো মেনেই নামাজ পড়তে হবে। কিন্তু আমাদের অনেকেই জানিনা যে নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি? তাদের জন্যই এই আয়োজন।
আমার সকলেই জানি, নামাজে যদি কোনো ওয়াজিব বিধান ভুলক্রমে ছুটে যায়, তবে সাহু সেজদার মাধ্যমে তার ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। কিন্তু নামাজে ফরজ বিধান গুলো অবশ্যই যথাযথ ভাবে পালনীয়। কেউ যদি নামাজের ফরজ গুলোর কোনো একটিকে বাদ দেয়, তবে তার নামাজ বাতিল বলে সাব্যস্ত হবে।
আজ আমি আপনাদের সামনে নামাজের ফরজ সমূহকে যথাক্রমে উপস্থাপন করবো, যেখানে নামাজের ভেতরের এবং নামাজের বাহিরের ফরজ সমূহ উল্লেখ থাকবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি?
সাধারণ ভাবে বলতে গেলে নামাজের ফরজ ১৩ টি। নামাজের ভেতরে ৬ টি এবং নামাজের বাহিরে ৭ টি।
তবে নামাজের ভেতরের ফরজের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন ফেকাহর কিতাবে মতভেদ আছে। যেমন, বাহরুর রাফেক ও শামীতে ৭ টি, আলমগীরী ও হেদায়ায় ৬ টি এবং কাবিরীতে ৮ টির বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে মোটকথা হলো, নামাজের ভেতরের ফরজ ৮ টি।
আরো পড়নুঃ নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?
ইমামগণের ঐক্যমতে নামাজের ভেতরে ৬ টি ফরজ এবং বাহিরে ৭ টি ফরজ। মোট ১৩ টি। সহজ ভাষায় নিচে উল্লেখ করা হলো। –
নামাজের ফরজ ১৩ টি, কি কি?
প্রথমেই আমরা জানবো নামাজের বাহিরের ফরজ গুলো সম্পর্কে। কারণ, নামাজের বাহিরের ফরজ গুলো আগে পালনীয়, তারপর নামাজের ভেতরের ফরজ গুলো সম্পর্কে জানবো।
নামাজের বাহিরে ৭ টি ফরজ
১ | শরীর পবিত্র হতে হবে। |
২ | কাপড় পবিত্র হতে হবে। |
৩ | নামাজের জায়গা পবিত্র হতে হবে। |
৪ | সতর ঢাকতে হবে। |
৫ | কিবলামুখী হতে হবে। |
৬ | ওয়াক্তমতো নামাজ পড়তে হবে। |
৭ | নামাজের নিয়ত করতে হবে। |
এগুলো নামাজের বাহিরের ফরজ সমূহ। চলুন এখন জেনে নিই নামাজের ভেতরের ফরজ সমূহ গুলো। –
আরো পড়ুনঃ নামাজে একই সূরা দুই রাকাতে পড়ার মাসআলা।
নামাজের ভেতরে ৬ টি ফরজ
১ | তাকবীরে তাহরিমা বলা, অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করা। |
২ | কিয়াম করা, অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া। |
৩ | কেরাত পড়া। |
৪ | রুকু করা। |
৫ | সেজদা করা। |
৬ | শেষ বৈঠক করা। |
বি.দ্র. : ৭ নম্বর হলো – নামাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ইচ্ছেকৃতভাবে নামাজ ভঙ্গকারী কোন কাজের (সালাম ফিরানোর) সাথে নামাজ থেকে বের হওয়া। এগুলোই হলো নামাজের ভেতরের ফরজ সমূহ। আশাকরি নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি ইতোমধ্যেই জেনে গেছেন।
এখন আমরা দারুল উলুম দেওবন্দ -এর বিভিন্ন মুফতি সাহেবদের সত্যায়িত এবং সর্বস্তরের উলামা মাশায়েখ সমর্থিত কিছু মতামত জানবো। –
(১) তাকবীরে তাহরিমা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে একমত হলেও তা কি রুকন না শর্ত – এ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে বিশুদ্ধ মতামত হলো “তাকবীরে তাহরিমা” নামাজের শর্ত; তা রুকন নয়। বাদায়েউস সানায়ের মুসান্নিফ এই মতকেই মুহাক্কিকগণের দিকে এবং এবং গায়াতুল বায়ানের লেখক আম মাশায়েকদের দিকে নিসবত করেছেন। এবং এটাইকেই বিশুদ্ধ মত বলে অভিহিত করা হয়েছে। -(বাহরুর রাফেক ১/২৯১)
আরো পড়ুনঃ নামাজের নিষিদ্ধ সময় সমূহ।
(২) তাকবীরে তাহরিমা শর্ত হওয়ার কারণেই ফরজ নামাজের তাহরিমা দ্বারা নফল নামাজ জায়েজ। কিন্তু এর বিপরীতে নফল তাহরিমা দ্বারা ফরজ জায়েজ নয়। -(বাহরুর রাফেক ১/২৯১)
(৩) যে দুটি ফরজ নিয়ে ইখতেলাফ রয়েছে –
- (১) মুসল্লির নিজ কর্ম দ্বারা নামাজ শেষ করা। এটাকে হযরত ইমাম আবু হানিফা রহ. ফরজ বলেছেন। আর সাহেবাইনের মতে ফরজ নয়।
- (২) তাদিলে আরকান, অর্থাৎ ধীর-স্থিরে নামাজের রুকন আদায় করা। এক রুকন আদায় করে সমস্ত অঙ্গ স্থির হওয়ার পর অন্য রুকন আদায় করা। এখানে প্রত্যেক রুকনে সর্বনিম্ন সময় হলো এক তাসবীহ পরিমাণ। হযরত ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম শাফিঈ, ইমাম মালেক এবং ইমাম আহমাদ (রহ.) এর মতে ফরজ। আর হযরত আবু হানিফা (রহ.) এর মতে ফরজ নয়। -(কাবিরী, পৃষ্ঠা ২৫৬)
মোটকথাঃ ইখতেলাফ ছাড়া নামাজের ভেতেরের প্রথম ৬ টি ফরজ ইচ্ছাকুত বা ভুলক্রমে ছুটে গেলে নামাজের ফরজ আদায় হবে না। আর ইখতেলাফ বিশিষ্ট দুটি ফরজ, বিশেষ করে “তাদিলে আরকান” ইচ্ছেকৃত ছেড়ে দিলে নামাজ পুণরায় আদায় করা ওয়াজিব হবে। ভুলে ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে।
প্রিয় পাঠক, নামাজের ফরজ গুলো আদায় করাও ফরজ। কেউ যদি ইচ্ছেকৃত ফরজ ছেড়ে দেয় তবে গুনাহগারও হতে পারে। আর ভুলক্রমে কেউ যদি ইখতেলাফ ছাড়া ফরজগুলো আদায় করতে ভুলে যায় তবুও তাকে পুণরায় নামাজ পড়তে হবে।
যাইহোক, আশাকরি আপনারা প্রত্যেকেই জানতে পেরেছেন নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি। তবুও আমি সংক্ষিপ্ত ভাবে আবারো বলে দিচ্ছি। নামাজের ফরজ ১৩ টি। নামাজের বাহিরে ৭ ফরজ এবং নামাজের ভেতরে ৬ ফরজ। মহান আল্লাহ আমাকে এবং আমাদের সবাইকেই আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।