অপরিচিতা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর
১. প্রশ্ন: ধনীর কন্যা অনুপমের মামার পছন্দ নয় কেন? বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর: ধনীর কন্যা অনুপমের মামার পছন্দ নয়। কারণ ধনীদের মেয়েরা মাথা হেঁট করে স্বামীর সংসারে থাকতে নারাজ। মামা অনুপমের জন্য এমন পাত্রী খুঁজছেন যার বাবা ধনী নয়। কারণ ধনীর কন্যা সংসারের সকল যন্ত্রণা অপমান নীরবে সহ্য করবে না ।
অন্যদিকে দরিদ্রের কন্যা এসবই মাথা পেতে নীরবে সহ্য করে যাবে। অনুপমের ঘরে স্ত্রী হিসেবে যে মেয়েই আসবে সে মাথা হেঁট করেই আসবে এটিই মামার প্রত্যাশা ।
২. প্রশ্ন: মেয়ের বয়স পনেরো শুনে মামার মন ভার হলো কেন?
উত্তর: পনেরো বছর বয়সেও মেয়ের বিয়ে হয়নি এমনটি ভেবে অনুপমের মামার মন ভার হলো। কারণ তিনি মনে করলেন যে ঐ মেয়ের বংশে কোনো দোষ আছে। তখন আট থেকে দশ বছর বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল।
- Related: অপরিচিতা গল্পের mcq প্রশ্নের উত্তর
এ সময়ের মধ্যে মেয়ের বিয়ে না হলে মনে করা হতো মেয়ের বংশে কোনো দোষ আছে। যে কারণে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। যে মেয়ের সাথে অনুপমের বিয়ের কথা চলছিল তার বয়স পনেরো ।
৩. প্রশ্ন: লেখকের মামা বিয়ে বাড়িতে স্যাকরাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন কেন?
উত্তর: অনুপমের মামা বিয়ে বাড়িতে স্যাকরা নিয়ে গিয়েছিলেন গহনা যাচাই করে দেখার জন্য। অনুপমের মামা অত্যন্ত হীন মানসিকতার অধিকারী। তিনি ভেবেছিলেন যে বিয়ে বাড়িতে কন্যার বাবা তাদের ঠকাতে পারেন কন্যার গহনাগুলোর
বিষয়ে।
কিন্ত অনুপমের মামা ঠকবার পাত্র নন। তাই কন্যার গহনাগুলো কতটুকু খাঁটি তা তিনি নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। আর সে কারণেই তিনি বিয়ে বাড়িতে স্যাকরাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।
৪. প্রশ্ন: কোনোকিছুর জন্যই অনুপমকে কোনো ভাবনা ভাবতে হয় না কেন?
উত্তর: মামা অনুপমের সংসারটাকে চারদিক থেকে এমন ভাবে ঘিরে রেখেছিলেন যে কোনোকিছুর জন্যই তাকে আর ভাবতে হতো না।
অনুপমের বাবা বেঁচে নেই, মা বেঁচে আছেন। তবে মা থাকলেও তার মামা ছিলেন আসল অভিভাবক। তিনিই সংসারের ভার নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন, সংসারের সকল ভাবনা তার। এ কারণেই কোনোকিছু নিয়ে আর অনুপমকে ভাবতে হয় না।
৫. প্রশ্ন: ”ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই।” কে, কেন একথা বলেছে?
উত্তর: কল্যাণীর বাবা শম্ভুনাথ বাবু অনুপমের মামাকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
অনুপমের মামা বিয়েবাড়িতে স্যাকরা নিয়ে গিয়ে কনের পিতাকে বলেন যে তিনি কনের গায়ের গহনাগুলোকে যাচাই করে নিতে চান। কন্যার পিতা নিদ্বির্ধায় তা করতে দেন।
- Related: অপরিচিতা গল্পের মূল কথা বা বিষয়বস্তু
যাচাই করা শেষ হলে সবাইকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে তিনি যখন বরপক্ষকে চলে যেতে বলেন তখন অনুপমের মামা
জানতে চান তিনি ঠাট্টা করছেন কি না। তার উত্তরে তিনি আলোচ্য কথাটি বলেছেন। মূলত তিনি এত নীচ মানসিকতার মানুষের সাথে আত্মীয়তা করতে চান না ।
৬. প্রশ্ন: বিয়ে সম্বন্ধে অনুপমের মামার বিশেষ মত’টি বর্ণনা কর।
উত্তর: বিয়ে সম্বন্ধে অনুপমের মামার বিশেষ মত’টি সংকীর্ণ এবং সুবিধাবাদী। বিয়েতে ধনীর কন্যা মামার পছন্দ নয়। তার মতে সংসারে যে মেয়ে আসবে সে যেন মাথা হেঁট করে আসে। অথচ টাকার প্রতি তার আসক্তির কমতি নেই।
তিনি এমন বেয়াই চান যার টাকা নেই অথচ যে টাকা দিতে ভুল করবে না। যাকে শোষণ করা চলবে অথচ বাড়িতে এলে তাকে তুচ্ছ – তাচ্ছিল্যও করা যাবে।
৭. প্রশ্ন: ছোটোকে যাঁহারা সামান্য বলিয়া ভুল করেন না তাঁহারা ইহার রস বুঝিবেন। এ কথার মাধ্যমে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: আকারে বা ব্যাপ্তিতে ছোটকে যারা ক্ষুদ্র বা তুচ্ছ জ্ঞান করেন না তারাই বৃহৎ ব্যক্তি বস্তু ঘটনা বা কাহিনির মমার্থ অনুধাবন করতে পারেন ।
ছোট মাত্রই ক্ষুদ্র নয় সামান্য মাত্রই তুচ্ছ নয়। কিশোর করি সুকান্ত ভট্টাচার্যের একুশ বছরের জীবন লক্ষ – কোটি মানুষের একশ একুশ বছরের জীবনের চেয়েও খ্যাতিপূর্ণ মহান। তাই কোনো ব্যক্তি বস্তু ঘটনা বা কাহিনির আকৃতি বা ব্যাপ্তির চেয়ে তার গুরুত্বকে যারা বড় করে দেখেন তারাই অপরিচিতা গল্পের মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারবেন।
৮. প্রশ্ন: ছেলেবেলায় পন্ডিতমশায় অনুপমকে শিমুল ফুল বা মাকাল ফলের সাথে তুলনা করতেন কেন?
উত্তর: অপূর্ব দেহকান্তি কিন্ত মেধার কমতির প্রতি লক্ষ করেই ছেলেবেলায় পন্ডিতমশায় অনুপমকে শিমুল ফুল বা মাকাল ফলের সাথে তুলনা করতেন ।
রক্ত রাঙ্গা শিমুল ফুল দেখতে খুবই সুন্দর, তবে তাতে কিন্ত কোনো গন্ধ নেই। মাকাল ফলও দেখতে লোভনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী অথচ খাদ্য হিসেবে তা একেবারেই অনুপযুক্ত ।
সমাজে এমন সুদর্শন মানুষ আছে যাদের দেখতে অনেক সুন্দর দেখায়, তবে তারা গুণহীন, আর সেইসব ব্যক্তিকে বোঝাতেই শিমুল ফুল বা মাকাল ফল কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে।
অনুপম ছেলেবেলায় দেখতে সুদর্শন ছিলেন কিন্ত সেই অনুপাতে মেধার পরিচয় দিতে না পারায় পন্ডিতমশায় তাকে শিমুল ফুল বা মাকাল ফল বলে অভিহিত করতেন।
৯. প্রশ্ন: কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করিবেন আমি সৎপাত্র কেন?
উত্তর: অনুপম নিজেকে একজন ভলোমানুষ দাবি করে। এ প্রসঙ্গে অনুপমের নিজের প্রতি প্রগাঢ় আত্মবিশ্বাস ফুটে উটেছে এখানে।
অপরিচিতা গল্পে কেন্দ্রীয় নায়কের চরিত্রে ছিল অনুপম । সে ছিলো তার মা ও মামার একান্ত অনুগত একজন। সাংসারিক কোনো বিষয়ে কথা বলার সাহস কখনো সে দেখাত না। তবে সে শিক্ষা জ্ঞান এবং চেহারার দিক থেকে ছিলো যোগ্য পাত্র। তার বন্ধু হরেশ বিয়ের কথা বলতেই সে রাজি হয়ে যায় ।
আর নিজেকে পাত্র হিসাবে অন্যের সাথে তুলনা করে এবং বলে কন্যার পিতা কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করিবেন আমি সৎপাত্র। মূলত এ কথার দ্বারা সে নিজেকে নিতান্তই একজন সৎ যোগ্য এবং ভালোপাত্র বোঝাতে চেয়েছে ।
১০. প্রশ্ন: সমস্ত মন যে সেই অপরিচিতার পানে ছুটিয়া গিয়াছিল কেন?
উত্তর: অপরিচিতা গল্পের নায়ক অনুপমের মনটা ছুটে গিয়েছিল তার কল্পলোকের রাজকন্যা কল্যাণীর পানে।
অনুপম তার মা ও মামার একান্ত অনুগত একমাত্র আদরের ছেলে। তাদের মুখের উপর কোনো কথা বলার সাহস বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইচ্ছা তার ছিল না ।
সংগত কারণেই আজ তার ভাগ্যে এ করুণ পরিণতি। মামার লোভী মানসিকতা আর শ্বশুরের অপমানবোধের কারণে তার বিয়েটা হতে গিয়েও আর হলো না।
কিন্ত অনুপমের মনটা আজও কিছু একটার অভাব বোধ করে এবং খুঁজতে থাকে চারদিকে । দিবা – রাত্রি সে তার প্রেয়সীর পানে ছুটে যেতে চায়। কিন্ত সে তো আজও অপরিচিতা অচেনা।
১১. প্রশ্ন: জায়গা আছে কথাটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: মায়ের সাথে যাত্রাপথে গাড়িতে ওঠার সময় কল্যাণীর কণ্ঠে প্রথম অনুপম শুনতে পায় ’জায়গা আছে’ কথাটি।
জায়গা আছে কথাটি অনুপমের কাছে চিরজীবনের গানের ধুয়া হয়ে রয়েছে।
বিয়ে করতে পারেনি বলে অনুপমের কোনো কষ্ট নেই বরং সুযোগ হলে কল্যাণীর কাজ পর্যন্ত সে করে দেয়। আর মনে মনে ভাবে এই তো জায়গা সে পেরেছে । যদিও তার পরিচয় শেষ হয়নি আজও সে অপরিচিতা ।তবুও ভাগ্য ভালো যে অনুপম জায়গা পেয়েছে ।
১২. প্রশ্ন: ভালো মানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট নাই। কেন ?
উত্তর: সংসারের কোনো রকম দায়িত্ব কাঁধে না নিয়ে আপাত নিরুপদ্রব ও নির্ঝঞ্ঝাট জীবনযাপনকে ব্যঙ্গ করে অনুপম এ কথা বলেছে ।
দায়িত্ববান সামাজিক মানুষ হিসেবে সমাজে বসবাস করতে গেলে মানুষকে সৎকাজে সহযোগিতা এবং অসৎ কাজে বিরোধিতা করতে হবে।
অপরিচিতা গল্পে কথক যেহেতু শিশুকাল থেকে কোলে কোলেই মানুষ এবং যৌবনেও তেমনটি রয়েছেন তাই তাকে সংসারের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হয়নি । আর বিরোধ বিপত্তিমূলক কোনো কাজে না থেকে তথাকথিত ভালো মানুষ হওয়াটাকে কথক উপর্যুক্ত বাক্যে ব্যঙ্গ করেছেন।
১৩. প্রশ্ন: অপরিচিতা গল্পের মামা অনুপমদের সংসারে গর্বের সামগ্রী কেন?
উত্তর: অনুপমদের মামা তাদের সংসারের গর্বের সামগ্রী কারণ তিনি আশ্চর্য রকম পাকা লোক। অনুপমদের যেখানে কোনো সম্বন্ধ আছে সেখানে সর্বত্রই মামা বুদ্ধির লড়াইয়ে জিতবেন এ একেবারে ধরা কথা।
অন্যপক্ষ বাচুঁক বা মরুক মামা অনুপমদের পক্ষকে জিতাবেনই। বস্তুত সংসারের স্বার্থরক্ষায় এবং অন্যপক্ষকে যেখোনো প্রকারে হাড়িয়ে সর্বদা জয়ের মাল্য অর্জন করার কৌশল ও দক্ষতার জন্য অপরিচিতা গল্পে অনুপমের মামা সমস্ত সংসারের প্রধান গর্বের সামগ্রী।
১৪. প্রশ্ন: বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কণ্যার বাপ বিবাহ আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে বলতে বরের অসহায়ত্বকে বুঝানো হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিয়েতে প্রায়শই এমন ঘটনা দেখা যায় যে, পণ্যের কারনে বরের বাবা বিয়েতে অসম্মতি জানায়। কিন্ত অপরিচিতা গল্পের অনুপমের ক্ষেত্রে এর বিপরীত ঘটনা ঘটেছে।
বরপক্ষের পণ্যগ্রহণের প্রবণতা লোভ এবং হীন মানসিকতার পরিচয় পেয়ে কনের বাবা শম্ভুনাথ যেন বর অনুপমকেই বিয়ের আসর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আলোচ্য অংশ অনুপমের এই অসহায় অবস্থাকেই বুঝানো হয়েছে।