তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত

তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত
Written by IQRA Bari

আর মাত্র কয়েকদিন অতিবাহিত হলেই রমজান মাস আমাদের উপর ছায়া বিস্তার করবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ এই মাসে দিনের বেলায় রোজা এবং রাতের বেলায় ইশার নামাজের পর তারাবিহের নামাজ আদায় করবে। এজন্য মুসলিম ভাই-বোনদেরকে তারাবির নামাজের দোয়া সম্পর্কে জানা জরুরি।

তারাবিহ (تَرَاوِيْح) মূলত একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো ‘বিশ্রাম করা’। অর্থাৎ, তারাবির নামাজের প্রতি ৪ রাকাত পরপর একটু বিশ্রাম নিয়ে আবারো নামাজ শুরু করা। তারাবির নামাজের নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে ইতোমধ্যেই আলোচনা করেছি।

আরও পড়ুনঃ রোজার ফরজ কয়টি ও কি কি?

এই আর্টিকেলে আজ আমরা আপনাদেরকে বলব, তারাবিহ নামাজের দোআ ও বিভিন্ন আমল সম্পর্কে। অর্থাৎ, তারাবির নামাজের কোন সময় কি দোয়া পড়তে হয় এই বিষয়েই আজ জানতে পারবেন।

তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত

তারাবির নামাজের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন দোয়া ও আমল রয়েছে। তাই আমরাও আপনাকে পর্যায়ক্রমে এক এক করে তারাবিহ নামাজের দোয়া সমূহ আরবি, বাংলা উচ্চরণ এবং অর্থ সহ নিচে তুলে ধরেছি।

তারাবিহ নামাজের নিয়ত

তারাবির নামাজ শুরু করার পূর্বে এই দোয়া পাঠ করা হয়।-

মূল আরবিঃ

نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلاة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

বাংলা উচ্চারণঃ

নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই ছালাতিত তারাবিহ্ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’আলা, মুতাওয়াজ জিহান ইলা-জিহাতিল ক্বা’বাতিশ শারীফাতি, আল্লাহু আকবার।

আরও পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

বাংলা নিয়তঃ

আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ক্বিবলামূখী হয়ে তারাবিহের ২ রাকাত নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।

তারাবিহ নামাজের দোয়া

তারাবিহ নামাজের প্রতি ৪ রাকাত পরপর নির্দিষ্ট কোনো দুআ বা তাসবীহ পাঠের কথা বিশুদ্ধ সূত্রে হাদিসে বর্ণিত নেই। তবে প্রতি ৪ রাকাত পর ততটুকু সময় পরিমাণ বসা মুস্তাহাব, যতটুকু সময় ৪ রাকাত নামাজ পড়তে লেগেছে।

এই সময়টাতে যে কোন দরূদ পড়া, তাসবীহ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, জিকির করা, দোয়া করা, অথবা নফল নামাজ পড়া জায়েজ আছে। চুপ থাকলেও কোনো গুনাহ নেই।

আলেমগণ এই সময়টাতে বিভিন্ন দোয়া ও আমল করেন। তারমধ্যে প্রচলিত একটি দুআ রয়েছে, এটিও করা যাবে। তবে আবশ্যক মনে করা যাবে না। নিচে দোয়াটি তুলে ধরা হলো।

তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাতের পর দোয়া

মূল আরবিঃ

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

বাংলা উচ্চারণঃ

‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া-রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ্।’

আরও পড়ুনঃ নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি?

তারাবির নামাজের প্রতি চার রাকাত পর আপনি চাইলে উপরোক্ত দোয়াটি পড়তে পারেন। দোয়াটি পড়লে অবশ্যই সওয়াব হবে। কিন্তু শর্ত হলো এই দোয়াটিকে সুন্নত বা জরুরি মনে করা যাবে না।

তারাবিহ নামাজের মোনাজাত

তারাবির নামাজ শেষ হলে আমরা মহান আল্লাহর নিকট যে কোনো ভাষায় মোজানাত করতে পারি। আরবিতে মোনাজাত করা আবশ্যক নয়। মোনাজানের মূল উদ্দেশ্য হলো বান্দার দুঃখ-কষ্ট এবং চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারে স্রষ্টাকে বলা। তাই যে কোনো ভাষায় মোনাজাত করতে পারেন।

তবে তারাবিহ নামাজের মুনাজাত হিসেবে একটি মোনাজাত প্রচলিত আছে। বিভিন্ন আলেমগণ এই মোনাজাতটি করে থাকেন। তবে এই মোনাজাতকেই স্রষ্টার কাছে চাওয়ার একমাত্র মোনাজাত বলে সীমাবদ্ধ করা অনুচিৎ। তবে আপনি চাইলে মোনাজাতটি মুখস্ত করতে পারেন। মোনাজাতের কথাগুলো বেশ চমৎকার।

মূল আরবিঃ

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

বাংলা উচ্চারণঃ 

আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান নার। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

আরও পড়ুনঃ রমজান বিষয়ক বই pdf 

সচারাচর প্রশ্নঃ

প্রশ্নঃ তারাবির নামাজ কি অথবা তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

উত্তরঃ তারারির নামাজ সুন্নত।

প্রশ্নঃ তারাবির নামাজ 8 রাকাত না 20 রাকাত?

উত্তরঃ তারাবির নামাজ ২০ রাকাত।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক, রোজা এমন একটি ইবাদত, যার পুরুস্কার মহান আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন। রমজান মাসের সারাদিনের সিয়াম এবং রাতের তারাবিহ একজন মুমিন বান্দার জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা বলে বুঝানো যাবে না।

রমজান উপলক্ষ্যে আমাদের সকলেই উচিত, রমজানের বিভিন্ন আমলগুলো সম্পর্কে জানা এবং মানা। আমি চেষ্টা করেছি তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত গুলো আপনাদের সামনে উপস্থান করার। আশাকরি একজন মুসলমান হিসেবে আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চই উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!