কবিরা গুনাহ তালিকা | ক্ষমা পাবার দোয়া ও আমল

কবিরা গুনাহ কি - কবিরা গুনাহ তালিকা ও মাফের উপায়
Written by IQRA Bari

কবিরা গুনাহ : প্রিয় পাঠক, আশা করছি স্রষ্টার অশেষ কৃপায় আপনি অনেক ভালো আছেন। আমরা সকলেই আদম সন্তান, যার সৃষ্টিগত নাম ইনসান বা মানুষ। স্রষ্টার সকল সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে স্বয়ং স্রষ্টাই শ্রেষ্ঠ হিসেবে মনোনীত করেছেন।

মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান বিষয়বস্তু হলো মানুষ ভুল বা গুনাহ করবে এবং সেই গুনাহের প্রতি অনুতপ্ত হয়ে স্রষ্টার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

মানুষ ছাড়াও পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর আনুগত্যের জন্য আরো দু’টি জাতিকে বিশেষ মর্যাদায় সৃষ্টি করেছেন, তা হলো ফেরেশতা এবং জ্বীন। ফেরাশতারা সম্পূর্ণ ভুল-ত্রুটি ও গুনাহমুক্ত একটি জাতি।

তবে জ্বীন জাতি মানুষের মতই পূণ্য অর্জন ও গুনাহ করার অধিকারী। স্রষ্টার ঐশী বাণী মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে পর্যায়ক্রমে মানুষ ও জ্বীন জাতির কথা উল্লেখ করেছেন এবং এই দুটি জাতির সকল কৃতকর্মের হিসেব নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ 

মানুষ ও জ্বীন জাতি যত গুনাহ করে তারমধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো কবীরা গুনাহ। এই গুনাহ করার জন্য মানুষ এবং জ্বীন জাতি কিয়ামতের দিন কঠোর ভাবে অপমানিত হবে এবং শাস্তিস্বরূপ জাহান্নামের অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে।

কবিরা গুনাহ কি?

স্রষ্টার আদেশ অমান্য করা করাই গুনাহ। তবে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে গুনাহ সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত। কবীরা গুনাহ এবং ছগীরা গুনাহ। ছগীরা গুনাহ মানে ছোট গুনাহ।

কবীরা গুনাহের আভিধানিক অর্থঃ

কবিরা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলোঃ বড়, বৃহৎ, বিরাট, বিশাল, মহান।

পারিভার্ষিক সংজ্ঞাঃ

() কাজী বায়যাবী রহ এর মতে কবীরা গুনাহ ঐসব গুনাহকে বলা হয়, যে গুনাহের ব্যাপারে শরীয়তে নির্দষ্ট শাস্তির বিধান রয়েছে।

(২) ইমাম গাজ্জালী রহ. বলেন, যেসব গুনাহ বান্দাহ নির্ভয়ে করে থাকে, তাতেই কবিরা গুনাহ বলা হয়।

কবিরা গুনাহের হুুকমঃ

() কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি তাওবা ছাড়া মারা গেলে জাহান্নাম তার জন্য অবধারিত। তবে কৃত গুনাহের নির্দিষ্ট শাস্তি ভোগ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (এক্ষত্রে মুসলমান হওয়া অত্যাবশ্যক)।

(২) কবীরা গুনাহ তাওবা ছাড়া ক্ষমা করা হয় না।

(৩) করীবা গুনাহকে হালাল মনে করে গুনাহে লিপ্ত থাকলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।

কবিরা গুনাহ তালিকা

আপনি যদি কবিরা গুনাহ সমুহ সম্পর্কে জানেন, তবে এই গুনাহ থেকে বাঁচা আপনার জন্য সহজ হবে বলে মনে করি। কবিরা গুনাহ সমূহের তালিকা নিম্নরূপঃ

আরও পড়ুনঃ ১০টি নতুন ইসলামী গজলের লিরিক্স

হযরত ওমর রাযি. -এর মতে, কবীরা গুনাহ নয়টি। কেউ কেউ বলেন সাতটি, আবার কেউ কেউ বলেন সতেরটি। নিম্নে বেশ কয়েকটি কবিরা গুনাহ উল্লেখ করা হলোঃ

() স্রষ্টার সাথে কাউকে শরীক করা। অর্থাৎ, আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে সমকক্ষ মনে করা।

(২) অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা।

(৩) ব্যভিচার করা।

(৪) নির্দোষ নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া।

(৫) জিহাদ থেকে পলায়ন করা।

(৬) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।

(৭) হেরেম শরীফে ফেৎনা সৃষ্টি করা।

আরও পড়ুনঃ রোজার ফরজ কয়টি ও কি কি? 

(৮) এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করা।

(৯) যাদু করা।

হযরত আবু হুরায়রা বাযি. -এর মতে উপরোল্লিতি নয়টিসহ আরো তিনটি কবীরা গুনাহ রয়েছেঃ

() মদ পান করা।

(২) সুদ খাওয়া।

(৩) চুরি করা।

অবশ্যই এগুলো ছাড়াও আরো কবিরা গুনাহ রয়েছে। তবে কবীরা গুনাহের মধ্যে এগুলোই শীর্ষে।

কবিরা গুনাহ মাফের উপায়

কবীরা হলো সবচেয়ে বড় গুনাহ। আর করিবা গুনাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ স্রষ্টার সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ, শিরক করা। শিরক এমন কবীরা গুনাহ, কেউ যদি শিরকের গুনাহ নিয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করে, তবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।

আরও পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত (সূরা ইয়াসিন আরবি pdf সহ)

আমরা সকলেই আদম সন্তান, নবী-রাসূলগণ ব্যতীত কেহই পাপ থেকে মুক্ত নয়। তাই জীবদ্দশায় প্রত্যেকটা মানুষের উচিৎ, নিজের গুনাহের প্রতি অনুতপ্ত হওয়া এবং গুনাহ করার পর পরই তাওবা করা।

কবিরা গুনাহ মাফের আমল

কুরআন -হাদিস থেকে গুনাহ মাফের বিভিন্ন আমল সম্পর্কে জানা যায়। এরই মধ্যে বেশকিছু আমলের কথা নিচে উল্লেখ করা হলো।

() বেশী বেশী ওজু করা।

(২) নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়া।

(৩) নামাজে রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ‘রব্বানা লাকাল হামদ’ বলা।

(৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করা।

(৫) হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফরজ নামাজ এর পর ৩৩ বাব সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করে এবং একশ বার পূর্ণ হবার পর একবার –

আরবি উচ্চারণঃ سُبْحَانَ اللهِ، اَلْحَمْدُ ِللهِ، اَللهُ أَكْبَرُ، لآ إلهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ

বাংলা উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকরাব। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওলাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।

এই দোয়া পাঠ করবে, তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়’। (সহিহ মুসলিম)

কবিরা গুনাহ মাফের তওবা

কবীরা গুনাহ মাফের উপায় একটাই। প্রথমেই কাঙ্খিত গুনাহটি ছেড়ে দিতে হবে। তারপর কৃত গুনাহের উপর ঘৃণা এবং পরিতাপের মাধ্যমে স্রষ্টার কাছে তাওবা করতে হবে। তবেই বান্দার কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তাছাড়া কবিরা গুনাহ মাফের দোয়া রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ শুক্রবারের আমল ও ফজিলত

মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা হুদের ১১৪ নম্বর আয়াত থেকে বুঝা যায়, বান্দার বিভিন্ন নেক আমলের দ্বারা পাপমোচন হয়ে যায়। তবে গুনাহ মাফের জন্য বিভিন্ন ইস্তিগফার বা দোয়া রয়েছে। তারমধ্যে একটি ইস্তিগফার হলোঃ

আরবি উচ্চারণঃ  أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

বাংলা উচ্চারণঃ  ‘আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়াতুবু ইলাইহি।’

বাংলা অর্থঃ আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, এবং আমি তাঁর কাছে তাওবা করছি।

গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু কথাঃ

প্রিয় পাঠক! আমরা মানুষ। দৈনন্দিন জীবনে আমরা কেহই গুনাহ হতে মুক্ত নই। ছগিরা ও কবিরা গুনাহে জীবনটা ভরপুর! আমাদের জীবনের কৃত সব গুনাহের জন্য কিয়ামতের মাঠে শাস্তি প্রদান করা হবে।

সেই বিচার দিবসে পরাক্রমাশালী দয়াময় আল্লাহ কারো সাথে ব্যভিচার বা জুলুম করবেন না। আমাদের সকল আমল ওজনের জন্য তিনি মিজান কায়েম করবেন।

যে ব্যক্তি অত্যন্ত ভাগ্যবান, সেইদিনটি তাঁর কতইনা খুশির দিন হবে। আর যারা পৃথিবীতে ফেৎনা সৃষ্টি করেছে, জুলুম করেছে, ব্যভিচার করেছে, প্রতীবেশীর হক্ক নষ্ট করেছে এবং তাওবা ছাড়া মৃত্যুবরণ করেছে, তার জন্য সেইদিনটি হবে কতইনা কষ্টের দিন!

জান্নাতিরা সেদিন আনন্দে মশগুল থাকবে। আর জাহান্নাহিরা লাঞ্ছনাকর আজাবে নিক্ষিপ্ত হবে। এই প্রতিশ্রুতি স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন। নিশ্চয় তিনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করে না।

তাই আসুন, আমরা সকলেই আমাদের কৃত গুনাহের প্রতি লজ্জিত হই এবং বিনা দ্বীধায় তাঁর দিকে ফিরে আসি। মহান আল্লাহ আমার এবং আমাদের সকলের জীবনের সমস্ত গুনাহ তাঁর রহমত ও নিজ গুণের উসিলায় ক্ষমা করুন! আমিন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!