শুক্রবারের আমল ও ফজিলত

শুক্রবারের আমল ও ফজিলত
Written by IQRA Bari

শুক্রবারকে জুমআর দিন বলা হয়। জুমআর দিন সাপ্তাহের সেরা দিন বলে মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। শুক্রবার হলো সাপ্তাহিক ঈদের মতো। এই দিনটিতে বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম বিশেষ ভাবে স্রষ্টার আরাধনায় মনোনিবেশ করে। শুক্রবারের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিস থেকে বিভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়।

ইসলামি শরিয়তে এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ”সুরা জুমআ’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরাও নাজিল করা হয়েছে।

’জুমআ’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায়, প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার দিনে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানগণ একটি নির্দিষ্ট সময়ে জামে মসজিদে একত্রিত হয়ে জোহর নামাজের পরিবর্তে জামাতের সঙ্গে যে নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সেই নামাজকে ’জুমাআর নামাজ’ বলে। এই নামাজকে উদ্দেশ্য করেই শুক্রবারকে জুমআর দিন বলা হয়।

সাপ্তাহজুড়ে আমরা প্রায় সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকি। কর্ম ব্যস্ততার কারণে নেক আমলের কাজে নিজেদেরকে খুব বেশী নিয়োজিত রাখতে পারি না। শুক্রবারে সবার কর্ম ব্যস্ততা কম থাকে। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এই সুযোগে আমাদের সকলেরই উচিত, জুমার দিনে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশে নিজেদেরকে পূণ্য কাজে নিয়োজিত করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুক্রবারের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আর তাঁর মুখ নিসৃত সেই পবিত্র বাণীগুলোই আপনাদেরকে জানাতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

জুমার দিনের ফজিলত

জুমআর দিনের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ’যার উপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। – সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৪১০।

জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো উত্তম রূপে গোসল করে সবার আগে মসজিদে যাওয়া। তারপর জুমার নামাজ আদায় করা। একটি হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তম রূপে গোসল করে প্রথম সময়ে মসজিদে এলো, সে যেন একটি উট দান করল। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে এলো, সে যেন একটি গাভী দান করল। ঠিক এমনি ভাবে যে ব্যক্তি তৃতীয় সময়ে এলো, সে যেন একটি শিংবিশিষ্ট দুম্বা দান করল। আবার যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে এলো, সে যেন একটি মুরগী দান করল। আর যে ব্যক্তি পঞ্চম সময়ে এলো, সে যেন একটি ডিম দান করল। (সুবহানাল্লাহ্)।

উক্ত হাদিসের শিক্ষা হলো উত্তম রূপে গোসল করে সবার আগেই মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করা। আমাদের অবশ্যই একটা কথা মনে-প্রাণে ধারণ করা উচিত, জুমার দিন ভারী কোনো কাজ না করা এবং দুনিয়াবি কোন কাজকে জুমার নামাজ অপেক্ষা গুরুত্ব না দেওয়া। কেননা, দুনিয়াবি কোনো কাজ স্রষ্টা প্রদত্ত হুকুমের উর্ধ্বে নয়। তাই অবশ্যই জুমার দিনকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতে হবে।

✔ জুমার দিন মসজিদে যাওয়ার আগে ও পরে
✔ মিসওয়াক ব্যবহার করা।
✔ উত্তম রূপে গোসল করা।
✔ পরিস্কার ও সুন্দর জামা পরিধান করা।
✔ আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা।
✔ পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া।
✔ আগে আগে মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করা।
✔ মসজিসে প্রবেশ করার সময় ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা।
✔ মনোযোগ সহকারে ইমামের খুৎবা শ্রবণ করা।
✔ মসজিদে দুনিয়াবি সকল কথাবার্তা ও কাজ হতে বিরত থাকা।
✔ বেশী বেশী দরূদ পাঠ করা।
✔ সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা ইত্যাদি।

এগুলো ছাড়াও এমন ছোট ছোট অনেক আমল রয়েছে। যেগুলো আমাদের করা উচিত।

জুমার নামাজের ফজিলত

জুমার নামাজের ফজিলত সম্পর্কে একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে এলো এবং মনোযোগ সহকারে নীরব থেকে ইমামের খুতবা শ্রবণ করলো, সে ব্যক্তির এই জুমআহ থেকে আগামী জুমআর মধ্যকার এবং অতিরিক্ত আরো তিনদিনের (ছোট) গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হলো। আর যে ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন সময়ে কাঁকর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক কর্ম করলো। (অর্থাৎ সে জুমআর সওয়াব নষ্ট করে দিলো।

অনেকেই আছে, জুমার নামাজের খুৎবা চলাকালীন সময়েও দুনিয়াবি কথোপকথনে জরিয়ে যায়। এটা নিঃসন্দেহে মন্দ কাজ। আমরা বাংলা ভাষাভাষী বলে হয়ত ইমামের (আরবি) খুৎবা বুঝতে পারিনা, তবুও নীরব থেকে ইমামের খুৎবা শুনতেই হবে। এটা শরীয়তের নির্দেশ। সুতরাং, আমাদেরকে সচেতনতার সাথে আমল করতে হবে।

জুমার দিনের বিশেষ আরেকটি আমল হলো, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা। এই আমলটা শুধু জুমার দিনের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের উচিত প্রতিনিয়তই রাসূলুল্লাহ (স.) এর উপর দরূদ পাঠ করা। দরূদ পাঠের অনেক ফজিলত রয়েছে।

একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমার দিন । সুতরাং ঐ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ কর । কেননা, তোমাদের পাঠ করা দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, কেউ যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর একবার দরূদ পাঠ করে, মহান আল্লাহ তা’য়ালা তার প্রতি ১০ টি রহমত নাজিল করেন। ( সুবহানাল্লাহ্)।

শুক্রবারে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। ফজরের নামাজের পর সূরা ইয়াসিন ও জুমার নামাজের পর সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা অন্যতম বিশেষ একটি আমলের অন্তর্ভূক্ত।

গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু কথাঃ

ইসলামের ছায়াতলে কোন অকল্যাণ নেই। পৃথিবীতে যত ভালো কাজ আছে সবই শরীয়তের দৃষ্টিতে সওয়াবের অন্তর্ভূক্ত। তবে হ্যাঁ, কোন আমলই যেনো লোক দেখানোর জন্যে না হয়। সকল আমলের একমাত্র পাওনাদার পরাক্রমশালি আল্লাহ্। আমাদের প্রত্যেকটা ইবাদত কেবল তাঁরই রাজি খুশির জন্য।

তবে একথা সত্য যে, অরিতিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশিত আমলের অতিরিক্ত কোনো কিছুকে আবশ্যকীয় মনে করা যাবে না। তবে এটা বিদআত হয়ে যাবে। আর প্রত্যেকটা বিদআতই ফেৎনা সৃষ্টি করে এবং গোনাহের দিকে নিয়ে যায়।

পরিশেষে হৃদয়ের সব ভালোবাসা উজাড় করে তাঁর জন্যই এই জীবনের প্রতিটা ভালো কাজ সোপর্দ করছি। পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করি জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে জানা ও মানা এবং আমাদের সকল নেক আমল কবুল করুন। আমিন!

Leave a Comment

error: Content is protected !!