আলিয়া মাদ্রাসার সিলেবাস বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (bmeb) কর্তৃক প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। এই সিলেবাসে ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এজন্য আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতই বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।
পাঠ্যক্রম অনুযায়ী আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সিলেবাসকে পাঁচটি স্তরে ভাগ করা যায়। ইবতেদায়ী বা প্রাথমিক শিক্ষা, দাখিল বা মাধ্যমিক শিক্ষা, আলিম বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা, ফাজিল বা স্নাতক শিক্ষা এবং কামিল বা স্নাতকোত্তর শিক্ষা ইত্যাদি।
ইবতেদায়ী শিক্ষা থেকে শুরু করে কামিল পর্যন্ত পৌঁছাতে একজন শিক্ষার্থীকে একাধারে মোট ১৭ বছর পড়াশোনা করতে হয়। বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার সিলেবাসে ইবতেদায়ী, দাখিল ও আলিম স্তর বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অন্তর্ভুক্ত এবং ফাজিল ও কামিল স্তরটি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে।
এই আর্টিকেলে যা যা থাকছে -
Toggleআলিয়া মাদ্রাসার সিলেবাস
ইসলামি শিক্ষা ধারায় আমাদের বাংলাদেশে দুটি পৃথক শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে। যেমন – আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা। এই দুটি শিক্ষা ব্যবস্থারই নিজস্ব সিলেবাস রয়েছে এবং সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে পরিচালিত হয়। আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসার পার্থক্য মোটামুটি ভাবে চোখে পড়ার মতো। যাইহোক, এখন মূল কথায় আসি।
শুরুতেই আমরা বলেছি, আলিয়া মাদ্রাসা সিলেবাসকে ৫ টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – ইবতেদায়ী, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ইত্যাদি। মোট ১৭ বছরের পড়াশোনার এই শিক্ষা সিলেবাসটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। –
ইবতেদায়ী বা প্রাথমিক শিক্ষা স্তর
ইবতেদায়ী বা প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে মোট ৫ বছর পড়াশোনা করতে হয়। তারপর এবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার এই প্রাথমিক ধাপটি পেরুতে হয়। ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষাকে পি.ডি.সি বলা হয়, যা বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য পঞ্চম শ্রেণীতে এই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসিই) এর মতই আলিয়া মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শিক্ষার সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। যা অনেকটা সাধারণত শিক্ষা সিলেবাসের মতই। তবে আলিয়া মাদ্রাসার ইবতেদায়ীর সিলেবাসে ইসলামিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
দাখিল বা মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর
দাখিল স্তরের পাঠ্যক্রমে মোট ৯টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামি শিক্ষার বিষয় ৫টি এবং সাধারণ শিক্ষার বিষয় ৪টি।
ইসলামি শিক্ষার বিষয়গুলো হলো: –
- আল-কুরআন ও তাজভিদ
- হাদীস
- আকীদা
- ফিকহ
- আরবি ভাষা ও সাহিত্য ইত্যাদি।
সাধারণ শিক্ষার বিষয়গুলো হলো: –
- বাংলা
- ইংরেজি
- গণিত
- বিজ্ঞান ইত্যাদি।
আলিম বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর
আলিম স্তরের পাঠ্যক্রমে মোট ১২টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামি শিক্ষার বিষয় ৭টি এবং সাধারণ শিক্ষার বিষয় ৫টি।
ইসলামি শিক্ষার বিষয়গুলো হলো: –
- আল-কুরআন ও তাফসীর
- হাদীস ও তার সনদ
- আকীদা ও তার প্রমাণ
- ফিকহ ও তার উৎস
- আরবি ভাষা ও সাহিত্য
- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইত্যাদি।
সাধারণ শিক্ষার বিষয়গুলো হলো: –
- বাংলা
- ইংরেজি
- গণিত
- পদার্থবিদ্যা
- রসায়ন
- জীববিজ্ঞান ইত্যাদি।
ফাজিল বা স্নাতক শিক্ষা স্তর
ফাজিল স্তরের পাঠ্যক্রমে মোট ১৫টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামি শিক্ষার বিষয় ৯টি এবং সাধারণ শিক্ষার বিষয় ৬টি।
ইসলামি শিক্ষার বিষয়গুলো হলো: –
- আল-কুরআন ও তাফসীর
- হাদীস ও তার সনদ
- আকীদা ও তার প্রমাণ
- ফিকহ ও তার উৎস
- আরবি ভাষা ও সাহিত্য
- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
- উসূলুল ফিকহ
- উসূলুল হাদীস
- তাফসীরের ইতিহাস ইত্যাদি।
সাধারণ শিক্ষার বিষয়গুলো হলো: –
- বাংলা
- ইংরেজি
- গণিত
- পদার্থবিদ্যা
- রসায়ন
- জীববিজ্ঞান
- অর্থনীতি
- সমাজবিজ্ঞান
কামিল বা স্নাতকোত্তর শিক্ষা স্তর
কামিল হলো আলিয়া মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা স্তর। এই স্তরে শিক্ষার্থীরা ২ বছর পড়াশোনা করে। কামিল স্তরের পাঠ্যক্রমে মোট ১৭টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামি শিক্ষার বিষয় ১১টি এবং সাধারণ শিক্ষার বিষয় ৬টি।
ইসলামি শিক্ষার বিষয়গুলো হলো: –
- আল-কুরআন ও তাফসীর
- হাদীস ও তার সনদ
- আকীদা ও তার প্রমাণ
- ফিকহ ও তার উৎস
- আরবি ভাষা ও সাহিত্য
- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
- উসূলুল ফিকহ
- উসূলুল হাদীস
- তাফসীরের ইতিহাস
- আরবি সাহিত্যের ইতিহাস
- আরবি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা ইত্যাদি।
সাধারণ শিক্ষার বিষয়গুলো হলো: –
- বাংলা
- ইংরেজি
- গণিত
- পদার্থবিদ্যা
- রসায়ন
- জীববিজ্ঞান
- অর্থনীতি
- সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি।
আলিয়া মাদ্রাসার সিলেবাসের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায়ও সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা। এই সিলেবাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইসলামি মূল্যবোধ, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা সিলেবাসের মূল বৈশিষ্ট্য
- আলিয়া মাদ্রাসা সিলেবাসে ইসলামি শিক্ষার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
- সাধারণ শিক্ষার বিষয়গুলোও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
- সিলেবাসটি আধুনিক ও বাস্তবমুখী।
- সিলেবাসটি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বিকাশে সহায়ক।
আলিয়া মাদ্রাসার সিলেবাসের সুবিধা
- আলিয়া মাদ্রাসা সিলেবাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায়ও সুশিক্ষিত হতে পারে।
- সিলেবাসটি আধুনিক ও বাস্তবমুখী হওয়ায় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বিকাশে সহায়ক।
- সিলেবাসটি শিক্ষার্থীদেরকে একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আলিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। ১৭৮০ সালে কলকাতায় লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় আলিয়া মাদ্রাসা। পুরো ভারতবর্ষে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থাকে সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে মনে করা হয়।