কওমী মাদ্রাসা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ ও মূলনীতির ওপর পরিচালিত ইলমে ওহীর বিশুদ্ধ চর্চার প্রাণকেন্দ্র। নববী আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসায় কোটি কোটি শিক্ষার্থীরা ইলমে ওহীর জ্ঞান চর্চা করে। এটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে জাতীয় শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
কওমি মাদ্রাসা জেনারেল শিক্ষার মতই একটি একাডেমিক শিক্ষা সিলেবাস নিয়ে গঠিত। যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। কৌতুহলী হয়ে বা জানার উদ্দেশ্যে অনেকেই প্রশ্ন করেন কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ কি কি এবং জেনারেল শিক্ষাক্রমের সাথে কওমি ক্লাসের সামঞ্জস্যতা আছে কি?
আজ আমি আপনাদের বলব, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাটা কিভাবে গঠিত এবং কওমি মাদ্রাসার জামাতের নাম গুলো কি কি? তাছাড়া, কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে বিভিন্ন অজানা বিষয় এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন।
কওমি মাদ্রাসা কি?
প্রচলিত দুই প্রধান মাদ্রাসা ধারার মধ্যে কওমি মাদ্রাসা অন্যতম। আলিয়া মাদ্রাসার সিলেবাসে ইলমে ওহীর পাঠ ছাড়াও আরোও বিভিন্ন বিষয়ের পাঠদান থাকলেও কওমি মাদ্রাসায় ইলমে ওহীর চর্চার প্রতি সবচে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এজন্য ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্রকে কওমি মাদ্রাসা বলা হয়।
১৮৬৬ সালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের গোড়াপত্তনের মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতির সূচনা হয়। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯০১ সালে দারুল উলুম হাটহাজারী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে।
বর্তমানে বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার ১৯৯টি। যেখানে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা ইলমে ওহীর জ্ঞান চর্চা করে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার দাওরা হাদিস পরীক্ষাকে মাস্টার ডিগ্রির সমমান দেওয়া হয়।
কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ
কওমি মাদ্রাসার শ্রেণি বা ক্লাসসমূহকে ’জামাত’ বলা হয়। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাক্রমে বর্তমানে দুটি সিলেবাস বিদ্যমান। যথা –
- দরসে নিজামী
- মাদানী নেসাব
দরসে নিজামীর সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত কিতাব সমূহের দরস মূলত লম্বা সময় ধরে দেওয়া হয়। আর মাদানী নেসাবের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত কিতাব সমূহের দরস অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়।
বিষয়টা এমন যে, মাদানী নেসাবের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ দরসে নিজামীর থেকে তুলনামূলক বেশি।
কওমি শিক্ষাক্রমে ক্লাসের ৪ টি ধাপ
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা পদ্ধতিকে আমরা ৪ টি ভাগে দেখতে পারি। তবে বুঝতেও সুবিধা হবে।
- ১. মক্তব বিভাগ
- ২. নাজেরা বিভাগ
- ৩. হিফজুল কুরআন বিভাগ
- ৪. কিতাব বিভাগ
১. মক্তব বিভাগ
মক্তব বিভাগে শিক্ষার্থীদেরকে বুনিয়াদি শিক্ষা দেওয়া হয়। এখানে একজন শিক্ষার্থীকে প্রায় ৩ বছর পড়াশোনা করতে হয়। কালিমা, নামাজ, দোয়া, মাসায়েল ও প্রাথমিক আরবি, বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা ও পাঠ দেওয়া হয়।
- পড়ুনঃ আলিম ক্লাসের বইয়ের তালিকা (মাদ্রাসা বোর্ড)
২.নাজেরা বিভাগ
নাজেরা বিভাগে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআন তিলাওয়াতের সহীহ ও শুদ্ধ নিয়ম সম্পর্কে পাঠদান করা হয়। তাছাড়া, কুরআনের শুদ্ধ তিলাওয়াতের জন্য মাখরাজ, মদ্দ ও নিয়ম-কানুন হাতে কলমে শেখানো হয়।
৩. হিফজুল কোরআন বিভাগ
হিফজুল কুরআন বিভাগে মূলত কুরআন মূখস্ত করা ও মূখস্ত করার পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়। হিফজুল কুরআন বিভাগ থেকেই মূলত কুরআনের হাফেজগণ বের হন।
৪. কিতাব বিভাগ
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাক্রমে উচ্চশিক্ষার ধাপ শুরু হয় কিতাব বিভাগের মাধ্যমে। কিতাব বিভাগে পড়াশোনার মধ্যদিয়েই একজন আলেম বা ইসলামিক স্কলারে উপনীত হয়।
কওমি মাদ্রাসার জামাতের নাম (দরসে নিজামী)
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মক্তব বিভাগ ও নাজেরা বিভাগ শেষ করে হিফজুল কুরআন বিভাগ অথবা কিতাব বিভাগে ভর্তি হতে পারে।
আবার শিক্ষার্থী চাইলে হিফজুল কুরআন বিভাগ শেষ করেও কিতাব বিভাগে ভর্তি হতে পারে। কিন্তু কিতাব বিভাগ শেষ করে হিফজুল কুরআন বিভাগে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার।
যাইহোক, কওমি মাদ্রাসার দরসে নিজামীর সিলেবাসে যেই ক্লাস গুলো রয়েছে চলুন তা জেনে নেওয়া যাক।
কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ (দরসে নিজামী)
ইবতেদায়িয়্যাহ
তাইসীর জামাত / বিশেষ জামাত
মিজান জামাত
নাহবেমীর জামাত
হেদায়েতুন নাহু জামাত
কাফিয়া জামাত
শরহে জামী জামাত
জামাতে শরহে বেকায়া
জালালাইন জামাত
মেশকাত জামাত
দারুল হাদিস (মাস্টার্স ডিগ্রি)
ইফতা (ফতোয়া বিভাগ)
মাদানী নেসাবের ক্লাসের নাম সমূহ
মাদানী নেসাব মূলত দীর্ঘমেয়াদী ৭ বছরের পরিপূর্ণ কোর্স। যেখানে আলাদাভাবে জামাত বা শ্রেণি ধরা হয় না, বরং এখানে শিক্ষার্থীদেরকে বর্ষ হিসেব করতে হয়।
প্রথম বর্ষ
দ্বিতীয় বর্ষ
তৃতীয় বর্ষ
চতুর্থ বর্ষ
পঞ্চম বর্ষ
ষষ্ঠ বর্ষ
সপ্তম বর্ষ (দাওরা হাদিস)
অষ্টম বর্ষ (ইসলামিক উচ্চতর আইন বিভাগ)
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক, কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ সহজ ভাষায় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশাকরি কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে আপনারা সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
আর হ্যাঁ, কোনো তথ্যে যদি ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে, তবে অনুগ্রহপূর্বক আমাদের জানাবেন। আমরা অবশ্যই ভুলত্রুটি সংশোধনের ইচ্ছেপোষণ করি। আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ