বিদায় অনুষ্ঠান মানেই বেদনার লগ্ন, শোকের দিন। কওমি মাদ্রাসার বিদায় অনুষ্ঠান গুলো শিক্ষক -ছাত্র উভয়ের মাঝেই আবেগ, কান্না, ভালোবাসা ও বেদনার শোক সৃষ্টি করে। সেদিন কওমি মাদ্রাসার বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের মনের বিভিন্ন কথা কান্নার ভঙ্গিমায় সবার সম্মুখে প্রকাশ করে।
আপনিও যদি একজন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তবে বিদায় অনুষ্ঠানের দিন উপস্থিত জনতার সামনে যেভাবে বক্তব্য দিবেন, তার একটি নমুনা এই ব্লগে উপস্থাপন করা হয়েছে। উক্ত বক্তব্যে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা রয়েছে, যা বক্তা ও শ্রোতাদের মাঝে আবেগের জায়গা তৈরি করবে।
কওমি মাদ্রাসার বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
আসসালামু আলাইকুম।
আজকের এই বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সভাপতি, প্রধান অতিথি, সকল শিক্ষক, অভিভাবক, সহপাঠী, এবং উপস্থিত সকল জনতাকে অন্তরের অন্তরস্থল থেকে সালাম ও ধন্যবাদ জানাই।
আজ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন দিকে প্রস্থান করতে যাচ্ছি। এই মাদ্রাসা আমাদের জীবনে একটি অমূল্য সম্পদ প্রদান করেছে। এই স্থানে আমরা জ্ঞান সংগ্রহ করতে এসেছিলাম।
শিক্ষা জীবনে এই যাত্রায় আমরা অনেক কিছু শেখেছি এবং নিজেদের শিক্ষিত করেছি। এটি আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে একটি বৃহত্তর সম্ভবনা দেয় এবং আমরা এই যাত্রায় আরও সাফল্য অর্জন করতে চাই।
প্রিয় শিক্ষকমণ্ডলী, আপনাদের শাসন, আপনাদের উপস্থিতি, এবং আপনাদের সমর্থনের জন্য আমরা আপনাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাদের জীবনকে শিক্ষার আলো দিয়ে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছেন এবং আমরা আপনাদের দেওয়া পরামর্শ গুলো জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে মেনে চলার চেষ্টা করবো।
শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এখনও অবুঝ। মানুষ হিসেবেও আমরা ভুলের উর্ধ্বে নই। শিক্ষাগ্রহণ করতে গিয়ে অনেক সময় জেনে -না জেনে আমরা বিভিন্ন ভুল করেছি। অনেক ক্ষেত্রে আপনাদের শাসনে তা থেকে বিরত হয়েছি এবং নিজেদের শোধরে নিতে চেষ্টা করেছি।
প্রিয় সহপাঠী / শিক্ষার্থীরা, এই মাদ্রাসা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা আপনাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ এবং আপনারা এর মাধ্যমে ভবিষ্যত সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। অনেকেই হয়ত আরও উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশ-বিদেশের আরও বড় প্রতিষ্ঠানে যাবেন, আবার অনেকেই সাংসারিক ব্যস্ততায় এখানেই পড়াশোনার ইতি টানবেন।
আমি জানি, বিদায়ের বিষাদ সুরে সকলেরই মন খারাপ। কিন্তু জীবন তো এভাবেই চলতে থাকবে। আজকের এই বিদায় মানেই নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা।
বিদায়ী সকল শিক্ষার্থীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমি আশা করি, তারা এই মাদ্রাসা থেকে যে শিক্ষা অর্জন করেছে, তা কাজে লাগিয়ে জীবনে সফল হবে। তারা সত্যিকারের মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করবে।
মাদ্রাসা জীবনে আমরা কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, আরবি, উর্দু, ইংরেজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছি। এই শিক্ষা আমাদেরকে একজন যোগ্য ও শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে বলে আশাবাদী।
আর তোমরা যারা নতুন শিক্ষার্থী আছো, তোমরাও আমাদের মতো একদিন এই মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যাবে। তোমরা এখন থেকেই শিক্ষার প্রতি অধিক মনোযোগী হও। মাদ্রাসার সুনাম যেনো তোমরাও অক্ষুন্ন রাখতে পারো।
আমি আশা করি, তোমরা মাদ্রাসার শিক্ষকদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে। তোমরাও একদিন ইসলামের আলো বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবে এই প্রত্যাশা সবসময়।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকেই হেফাজত করুন। আমীন। ধন্যবাদ এবং সাফল্য শুভকামনা সবাইকে!
শেষ কথা
প্রিয় শিক্ষার্থী, আপনি যদি কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে থাকেন, তবে নিশ্চই জানেন যে, কওমি মাদ্রাসার বিদায় অনুষ্ঠান গুলো কতটা আবেগপ্রবণ হয়। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা জীবনের সময়টা যেনো কয়েক যুগ মনে হয়।
এজন্য শিক্ষার্থীরা কওমি মাদ্রাসার বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেকেই কেঁদে ফেলে। শ্রোতারাও কাঁদে। এই বিদায়ের মূহুর্তটা যেনো সত্যিই বিষাদময়। যাইহোক, আশাকরি আপনারা কওমি মাদ্রাসার বিদায় অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করছেন।