বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম সকল শিক্ষার্থীকেই জানা অপরিহার্য। কারণ, বাংলা বানানের নিয়মরীতি জানার মধ্যদিয়ে ভাষা শুদ্ধভাবে ব্যবহার করা যায়। প্রমিত বাংলা বানানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আজ আমরা বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের ৫টি নিয়ম সম্পর্কে জানবো।
তবে এখানে প্রমিত বাংলা বানানের ১০টি নিয়ম দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রশ্নে প্রায় সময়ই ৫ টি অথবা ১০ টি নিয়মের কথা লিখতে বলা হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ১০ টি নিয়মই দেওয়া হয়েছে। আপনি চাইলে ১০ টি নিময়ই শিখতে পারেন।
এই আর্টিকেলে যা যা থাকছে -
Toggleবাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের ১০টি নিয়ম
বাংলা একাডেমি আধুনিক বানান রীতিতে বাংলা বানানের জটিলতা দূর করার জন্য কতিপয় নিয়ম প্রণয়ন করেছে। বাংলা একাডেমি কর্তৃক আধুনিক/প্রমিত বাংলা বানানের বিশেষ বিশেষ ১০ টি নিয়ম নিচে উদাহরণ সহ তুলে ধরা হলো –
- পড়ুন: বাংলা ভাষার মূল উপাদান কি? (ক্ষুদ্রতম একক ও উপকরণ)
প্রশ্নঃ বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লিখ।
অথবা, আধুনিক বাংলা বানানের দশটি নিয়ম উদাহরণসহ লিখ।
অথবা, প্রমিত বাংলা বানানের তিনটি নিয়ম লিখ।
উত্তরঃ
১. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত :
রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত হবে না। এই নিয়ম তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশি সকল শব্দের বেলায় প্রয়োজ্য হবে।
উদাহরণঃ – আর্চনা, কার্তিক, বার্ধক্য, সর্ব, ধর্ম, কর্জ, ফর্মা, জার্মানি, শর্ত ইত্যাদি।
২. সন্ধি হলে ‘ম’ স্থানে অনুস্বার (ং) :
সন্ধির সময় পদের অন্তস্থিত ম্-এর পর যদি ক, খ, গ, ঘ থাকে, তাহলে ‘ম’ এর স্থানে অনুস্বার (ং) লিখতে হবে। অনুস্বার এর স্থানে বিকল্প হিসেবে ‘ঙ’ লেখা যাবে।
উদাহরণঃ – অহংকার, (বিকল্প হিসেবে অহঙ্কার)। প্রলয়ংকর, (বিকল্প হিসেবে প্রলয়ঙ্কর)।
৩. হস্ চিহ্ন :
শব্দ উচ্চারণের সময় শব্দান্তে ‘অ’ এর উচ্চারণ অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয় না। এজন্য অনেক শব্দের শেষে হস্ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাংলা ভাষায় এই চিহ্ন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
- পড়ুন: সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য (উদাহরণ সহ)
উদাহরণঃ – মাল, টক, জজ, পকেট, হুক ইত্যাদি।
৪. ই, ঈ-কার :
(ক) যদি মূল সংস্কৃত শব্দে ‘ঈ’ থাকে, তবে তদ্ভব বা তঃসমদৃশ শব্দে ‘ঈ’ অথবা এর বিকল্প হিসেবে ’ই’ ব্যবহার করতে হবে।
উদাহরণঃ – পক্ষী > পাখী > পাখি।
(খ) স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দের শেষে ঈ-কার হবে।
উদাহরণঃ – নেত্রী, গুণবতী, জননী ইত্যাদি।
তবে অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে কেবল ই-কার হবে।
উদাহরণঃ – বিবি, ঝি, বৌদি ইত্যাদি।
(গ) ব্যক্তি বা পুরুষ বুঝাতে তৎসম শব্দের শেষে ঈ-কার হবে।
উদাহরণঃ – জ্ঞানী, ধনী, মেধাবী, যাত্রী ইত্যাদি।
(ঘ) জাতি ও ভাষার নামের শেষে নতুন নিয়ম অনুযায়ী ই-কার হবে।
- পড়ুন: বাংলা শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন (সহজ ও কার্যকরী কৌশল)
উদাহরণঃ – আরবি, ইংরেজি, ইরানি, জার্মানি ইত্যাদি।
৫. উ, ঊ-কার :
(ক) তৎসম শব্দে উ-কার অপরিবর্তিত থাকে।
উদাহরণঃ – মূল, বধূ ইত্যাদি।
তবে তদ্ভব ও বিদেশি শব্দে কেবল উ-কার হয়।
উদাহরণঃ – কবুল, চুন, খুশি, বুড়ি ইত্যাদি।
(খ) ক্রিয়াবাচক শব্দে শুধু উ-কার ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণঃ – বসুন, করুন, ঘুমানো ইত্যাদি।
৬. জ, য সম্পর্কিত :
কিছু কিছু শব্দে ‘য’ না লিখে ‘জ’ লিখতে হয়।
উদাহরণঃ – জাতি, কাজ, জোড়া ইত্যাদি।
৭. ণ ও ন-এর ব্যবহার :
সংস্কৃত বা তৎসম শব্দে ণ-ত্ব বিধান অনুযায়ী ‘ণ’ ব্যবহার করতে হয়।
উদাহরণঃ – ঋণ, পাষাণ ইত্যাদি।
বেশি-বিদেশি শব্দে বা ক্রিয়াপদে কখনো ‘ণ’ ব্যবহার করা যাবে না।
উদাহরণঃ – কুরআন, সোনা, ইরান, গভর্নর ইত্যাদি।
৮. ওঁ-কার ও ঊর্ধ্ব কমা :
প্রচলিত শব্দের উচ্চারণ, উৎপত্তি বা অর্থের পার্থক্য বোঝানোর জন্য অতিরিক্ত ও-কার বা ঊর্ধ্ব কমা যথাসম্ভব ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে যদি অর্থ গ্রহণে অসুবিধা দেখা দেয়, তবে ব্যবহার করা যাবে।
উদাহরণঃ – কাল, কালো; পড়, পড়ো; দুটি, দু’টি; একশ, একশ’ ইত্যাদি।
৯. শ, ষ, স :
মূল সংস্কৃত শব্দের অনুসারে তৎসম ও তদ্ভব শব্দে শ, ষ, বা স ব্যবহার করতে হবে।
উদাহরণঃ – বংশ>বাঁশ, মশক>মশা ইত্যাদি।
বিদেশি শব্দের উচ্চারণ অনুসারে ‘S’ এর স্থানে ’স’ এবং ‘SH’ এর স্থানে ‘শ’ হবে। বিদেশি শব্দে কখনই ‘ষ’ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, বিদেশি ভাষায় ‘ষ’ ধ্বনি নেই।
উদাহরণঃ – পেনসিল, শরবত, শহর, পোশাক, খুশি ইত্যাদি।
১০. বিসর্গ :
শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহার করা যাবে না।
উদাহরণঃ – করত, প্রধানত, মূলত, প্রায়শ ইত্যাদি।
পদমধ্যস্থ বিসর্গ থাকবে; তবে অভিধানসিদ্ধ হলে পদ মধ্যস্থ বিসর্গ বর্জনীয়।
উদাহরণঃ – দুস্থ, নিস্পৃহ ইত্যাদি।
শেষ কথা
বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মগুলোর মধ্য হতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি বানান রীতি উদাহরণসহ আপনাদের সামনের উপস্থাপন করা হয়েছে। আপনি যদি প্রমিত বাংলা বানানের প্রয়োজনীয়তা বুঝেন, তবে নিশ্চই শুদ্ধ বানানের জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলো জানতে হবে।
আমরা প্রমিত বাংলা বানানের ১০টি নিয়ম উল্লেখ করেছি। আপনি যদি শিক্ষার্থী হন তবে প্রয়োজন অনুসারে আধুনিক বাংলা বানানের ৫টি নিয়মও শিখতে পারেন। অথবা তিনটি। তবে বাংলা ভাষায় নিজের পাণ্ডিত্ব অর্জনের জন্য অবশ্যই আপনাকে বাংলা একাডেমির বানান রীতি অনুসরণ করতেই হবে।