ইসলামের অনুসারী তথা মুমিনদের মধ্য হতে প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নর-নারীর উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। রোজা অন্য সকল ইবাদতের চেয়ে ভিন্ন এবং এর প্রতিদান স্রষ্টা নিজ হাতেই প্রদান করবেন। রোজার কিছু মৌলিক আচার আছে, যা ইসলামী শরীয়তের ভাষায় ফরজ বলে অভিহিত করা হয়। রোজার ফরজ কয়টি ও কি কি এই বিষয়েই আজকের আলোচনা।
রোজা রাখার জন্য অবশ্যই রোজার ফরজ গুলো আদায় করতে হবে, আর এজন্য রোজার ফরজ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। কেউ যদি রোজার ফরজ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তবে তার জন্য ফরজ গুলো আদায়েও সুবিধা হবে।
আরও পড়ুনঃ সাহরি, রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া (আরবি -বাংলা ছবিসহ)
এই আর্টিকেলে যা যা থাকছে -
Toggleরোজার ফরজ কয়টি ও কি কি?
রোজার সর্বমোট ৩টি ফরজ। তারমধ্যে রোজার ফরজ সমূহ যেমন –
- রোজার নিয়ত করা।
- সুবহে সাদিকের পূর্ব থেকে সন্ধ্যা তথা ইফতারের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকা।
- স্ত্রী সহবাস যৌন আরচণ থেকে বিরত থাকা।
ফরজ বলতে ইসলামী শরীয়তের অত্যাবশ্যক বিধান গুলোকে বুঝানো হয়। কেউ যদি রোজার কোনো ফরজ বিধানকে পালন না করে তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আবার কেউ যদি রোজার ফরজ সমূহ থেকে কোনো একটিকে অস্বীকার করে তবে সে ইসলাম থেকে খারেজ হয়ে যাবে।
রোজা রাখার শর্ত
রোজার শর্ত ৬ টি। কোনো মানুষের মধ্যে যদি এই চয়টি শর্ত পাওয়া যায়, তবে তার উপর রোজা ফরজ হবে। যেমন –
আরও পড়ুনঃ রমজানের ৩০ দিনের ৩০টি ফজিলত
- মুসলিম হওয়া
- বালেগ হওয়া বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া
- জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া
- অক্ষম না হওয়া বা রোজা পালনে সামর্থ্যবান হওয়া।
- ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা নারী।
- মুসাফির না হওয়া। (মুসাফিরের জন্য রোজা ফরজ নয়। তবে পরবর্তীতে কাজা করে নিতে হবে।)
উপরোক্ত শর্তগুলো যদি কোনো মানুষের মাঝে বিদ্যমান থাকে, তবেই কেবল তার উপর রোজা ফরজ হবে। নাহয় রোজা ফরজ নয়।
রোজার উদ্দেশ্য
রোজা রাখার উদ্দেশ্য হলো পরক্রমাশালী মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, সকল অন্যায় পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাকওয়া বৃদ্ধি করা।
এই ব্যাপারে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন,
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো”। - সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩
আরও পড়ুনঃ রমজান মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৩
রোজার উপকারিতা
রোজার একটি বিশেষ উপকারিতা হচ্ছে রোজা মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত রাখে। মানুষের কুপ্রবৃত্তি ধুয়ে মুছে দেয় এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ঈমানের শাখা প্রশাখা সঞ্জিবীত করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর হয়ে যায়। যেমন –
- উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদ্রোগ ও স্থূলতা প্রতিরোধ করে
- হজম শক্তিজনিত সমস্যা দূর করে
- উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোজার কোনো বিকল্প নেই।
- স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমে গিয়ে ব্রেনের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
- নেশাদ্রব্য থেকে মুক্ত থাকা যায়।
এমন আরো বিভিন্ন শারীরিক উন্নতির পাশাপাশি রোজা রাখার মাধ্যমে সর্বোপরি মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
রমজানের ফজিলত
রমজানের বহু ফজিলতের কথা কুরআন এবং হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, রমজান এমন একটি মাস যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে। -সূরা বাকারা
আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত
কুরআনের অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, (রমজানে) লাইলাতুল ক্বদর নামে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। -সূরা ক্বদর
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য এবং এর প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করবো।
অন্য হাদিসে, রোজাদারদের জন্য দুটি খুশি। একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। -বুখারী ও মুসলিম।
প্রিয় পাঠক, এই ব্লগে রোজার ফরজ কয়টি ও কি কি তার পাশাপাশি রোজা সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করার চেষ্টা করেছি। আশাকরি আপনারা রোজার ফরজ সমূহ জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন ইনশাআল্লাহ।