জান্নাত কয়টি: জান্নাত চিরস্থায়ী সুখের জায়গা। ভূপৃষ্ঠের সকল প্রাণীর জন্যই ইহকাল ক্ষণস্থায়ী। আমরা সকলেই চিরস্থায়ী জীবনের দিকে ছুটে চলছি। স্রষ্টাপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থায় আমাদের জন্য এমন কিছু নিয়মকানুন আবশ্যকীয় করে দেওয়া হয়েছে, যেগুলো বিশ্বাস এবং মানার মাধ্যমে চিরস্থায়ী জীবনের কল্যাণ সাধন হয়। এর বিনিময়ে আমাদের জন্য পুরুস্কার হিসেবে সুসজ্জিত জান্নাত!
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এবং হাদিস শরীফে জান্নাতের নিয়ামত সম্পর্কে বিশদ আলোচনা রয়েছে। বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থেও জান্নাত সম্পর্কে বিশাল বিশাল অধ্যায় মুফাচ্ছিরগণ লিখেছেন।
মুসলিম সমাজে জান্নাত সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের উদ্ভব হয়। যেমন: জান্নাত কয়টি? জান্নাত কাদের জন্য? জান্নাতের দরজা কয়টি এবং জান্নাতের দরজা সমূহের নাম কি কি? এই বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন। তাই জান্নাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট আলোচনা করা হলো।
Table of Contents
জান্নাত কি?
জান্নাত ( جنّة ) একটি আররি শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ: বাগাান, উদ্যান, আবৃত স্থান। জান্নাতে নির্মিত আকর্ষণীয় প্রাসাদ, আসন, আসবাবপত্র সবকিছুই স্বর্ণ-রৌপ্য, মণি-মুক্তা, দ্বারা তৈরি। স্রষ্টার নির্দেশিত পথে যারা আরোহণ করে তাদের জন্যই স্রষ্টাপ্রদত্ত জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
জান্নাত কেমন হবে?
জান্নাত এমনই একটি সুখের স্থান, যার সুখ সম্পর্কে আমরা কখনই ধারণা করতে পারবো না। জান্নাত এতই সুন্দর যা আমাদের চক্ষু কখনই দেখেনি এবং আমাদের অন্তর কখনই কল্পনাও করতে পারেনি।
জান্নাতে কারা যাবে?
স্রষ্টার পক্ষহতে একমাত্র জীবনব্যবস্তার নাম ইসলাম। ইসলাম ব্যতীত মহান স্রষ্টার কাছে কোনো ধর্মই গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামের ধর্মীও গ্রন্থ আল কোরআন এবং বার্তাবাহক হিসেবে মনোনীত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাস।
আরও পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ
স্রষ্টার সেই ঐশী গ্রন্থ এবং তাঁর মনোনীত রাসূল স. থেকে জান্নাতের বিষয় সুস্পষ্ট করা হয়েছে। সেই ভাষ্যমতে ইসলামের অনুসারী তথা এক স্রষ্টায় বিশ্বাসী মুসলমানদের জন্যই জান্নাত।
জান্নাত কয়টি?

জান্নাত কয়টি – জান্নাতের দরজা সমূহ
মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে ৮ টি জান্নাতের নাম বা স্তর এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি জান্নাতের স্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
জান্নাতের নাম সমূহঃ
(১) জান্নাতুল ফিরদাউস। যার অর্থ হচ্ছেঃ জান্নাতের (সর্বোচ্চ) বাগান।
- যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। – সূরা কাহাফ ১৮, আয়াত ১০৭
- তারা ফিরদাউসের উত্তরাধিকার লাভ করবে, যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে। -আল মু’মিনুন ২৩, আয়াত ১১
(২) দারুল মাকাম। যার অর্থ হচ্ছেঃ স্থায়ী আবাসের বাড়ি।
- যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী দারুল মাকাম দান করেছেন। সেখানে কোনো ক্লেশ আমাদেরকে স্পর্শ করে না, কান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না। -সূরা ফাত্বির ৩৫, আয়াত ৩৫
(৩) দারুল কারার। যার অর্থ হচ্ছেঃ আখেরাতের আলয়।
- পার্থিব এ জীবন ক্রীড়-কৌতুক ছাড়া কিছুই নয়, আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন- তারা যদি জানত! -আল আনকাবূত ২৯, আয়াত ৬৪
(৪) দারুস সালাম। যার অর্থ হচ্ছেঃ শান্তির নীড়।
- তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে শান্তির নীড়। তিনিই তাদের পৃষ্ঠপোষক এজন্য যে তারা (সঠিক) আমল করেছিল। -আল আন’আম ৬, আয়াত ১২৭
আরও পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত (আরবি pdf বই সহ)
(৫) জান্নাতুল মাওয়া। যার অর্থ হচ্ছেঃ আশ্রয়ের বাগান বা বসবাসের বাগান।
- যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। -আন-নাজম ৫৩, আয়াত ১৫
(৬) দারুন নাঈম। যার অর্থ হচ্ছেঃ সুখ -স্বাচ্ছন্দ্য, দান-নেয়ামত পূর্ণ বাগান।
- কিতাবধারীরা যদি ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে তাদের পাপ অবশ্যই মোচন করে দিতাম আর তাদেরকে নেয়ামত পূর্ণ বাগানে অবশ্যই দাখিল করতাম। – আল মায়িদাহ ৫, আয়াত ৬৫
- যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম কর্ম করে, তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ঈমানের বদৌলতে সৎপথে পারিচালিত করবেন। নিয়ামতে পূর্ণ বাগানে, তাদের পাদদেশে ধর্ণাধারা প্রবাহিত হবে। -সূরা ইউনুস ১০, আয়াত ৯
(৭) দারুল খুলদ। যার অর্থ হচ্ছেঃ চিরস্থায়ী বাগান।
- তাদেরকে ডিজ্ঞাসা কর-এটাই উত্তম না না চিরস্থায়ী বাগান, মুত্তকীদেরকে যার ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল? তাদের জন্য এটা হবে প্রতিদান ও শেষ আবাস্থল। -সূরা আল ফুরক্বান ২৫, আয়াত ১৫
(৮) জান্নাতুল আদন। যার অর্থ হচ্ছেঃ অনন্ত সুখের বাগান।
- মুমিন পুরুষ আর মমিন নারীদের জন্য আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন জান্নাত যার নিম্বদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা চিরদিন থাকবে। -সূরা আত-তাওবাহ ৯, আয়াত ৭২
- তা হল চিরস্থায়ী বাগান, তাতে তারা প্রবেশ করবে। -সূরা আর -রাদ ১৩, আয়াত ২৩
উপরোল্লেখিত জান্নাতগুলোর মাঝে জান্নাতুল ফিরদাউস হলো সবচেয়ে উচ্চতর জান্নাত। যেখানে নবী-রাসূলগণ এবং মহান আল্লাহর বিশেষ পছন্দের মুত্তাকি বান্দারা থাকবেন।
জান্নাতের দরজা কয়টি এবং কি কি?
জান্নাত চিরস্থায়ী সুখের আবাসস্থল। যেখানে অতি ভাগ্যবান এবং পূণ্যবান বান্দারা বসবাস করবে। হাদিস থেকে আমরা জান্নাতের আটটি দরজা সম্পর্কে জানতে পারি। প্রতিটি জান্নাতের দরজার ইউনিক নাম এবং মর্যাদার দিক দিয়েও ভিন্নতা রয়েছে। প্রতিটি জান্নাতি মানুষকে তাঁর পূণ্যের উপর ভিত্তি করে মহান আল্লাহ স্থান নির্ধারণ করবেন।
জান্নাতের দরজার নাম সমূহ
- বাবুস সালাহ
- বাবুল জিহাদ
- বাবুস সাদাকাহ
- বাবুর রাইয়ান
- বাবুল হজ
- বাবুল কাদিমিনুল গায়িধ
- বাবুল ইমান
- বাবুজ জিকর
হাদিসে বর্ণিত জান্নাতের এই দরজাসমূহ দিয়েই জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
আরও পড়ুনঃ শুক্রবারের আমল ও ফজিলত
একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে “রাইয়ান” নামে একটি দরজা আছে। সে দরজাটি দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে।
এভাবেই প্রত্যেকটি দরজার আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জান্নাত কয়টি আশাকরি উত্তর পেয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু কথাঃ
আমরা ক্ষণস্থায়ী জীবনের মোহে পড়ে চিরস্থায়ী জীবনকে ভুলে যাই। আমাদের আসল ঠিকানা যে জান্নাত যে কথাও আমাদের মনে থাকে না। তাই বিতাড়িত শয়তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সর্বদাই পাপ কাজে লিপ্ত রয়েছি। পরাক্রমশালী আল্লাহর পক্ষহতে সুস্পষ্ট জ্যৌতিরময় বাণী তথা কুরআন আসার পরও আমরা নিমজ্জিত রয়েছি অন্ধকারে আচ্ছন্ন বিষাক্ত আমবস্যার আধারে।
চারদিকে অন্ধ দাজ্জালের ঘোরতর ফেৎনা। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদেরকে আলোর পথে আসতে হবে। নাহয় আমরা চিরতরে বিলীন হয়ে যাব অন্ধকারের দিকে। যেখান থেকে ফিরে আসার আর কোন পথ নেই।
হে দয়াময় আল্লাহ!
আমাদের রক্ষা করুন। আমরা যেনো আপনার ঐশীবাণী মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এবং রাসূল স. এর হাদিস অনুযায়ী আমল করতে পারি। আমাদের হেদায়াত করুন। আমাদের পথচলা সুগম করুন। আমরা তো আপনার দিকেই প্রত্যবর্তনশীল। আপনার অশেষ কৃপায় আমাদের ক্ষমার চাদরে ঢেকে নিয়ে আপনার জান্নাতুল ফিরদাউসে সকল মুসলিম ভাই-বোনকে কবুল করে নিন। আমিন!