নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করুন – সমালোচনা এবং আত্মসমালোচনার মধ্যে বিশাল ফরাখ। সমালোচনা মানুষকে পিছিয়ে দেয় আর আত্মসমালোচনা মানুষকে সফলতা এনে দেয়। অথচ, আমরা আত্মসমালোচনা না করে অন্যের সমালোচনায় নিজের গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করি।
আপনি কি জানেন, নিজেকে নিয়ে কিভাবে সমালোচনা করতে হয়? নিজের সম্পর্কে সমালোচনা মানে ’আত্মসমালোচনা’। এটা এমন গুরুত্বপূর্ণ যে, যা আমি- আপনি হয়তোবা কখনই ভাবিনি, ভাবার চেষ্টাও করিনি।
কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন, আত্মসমালোচনা মানুষকে অনেক উপরে নিয়ে যায়। আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে। সমালোকেরা সাধরণত অন্যেক ভুল গুলো ধরতে চেষ্টা করে এবং নিজ থেকে পরামর্শ দিতে চায়। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, যারা এমনটা করে তারা “সমালোচিত ব্যক্তিদের” থেকে কোনো না কোনো ভাবে অনেক পিছিয়ে যায়।
সমালোচনা নয়, আত্মসমালোচনা সফলতার ভিত্তি
আমরা সাধারণত অন্যের সমালোচনা বা বদনাম বলতে পছন্দ করি। এটা অনেকেই দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ বানিয়ে ফেলেছি। কিন্তু অন্যের সমালোচনা করতে গিয়ে আমাদের নিজেদের ভুল গুলো আর কখনই বুঝতে পারিনা। যে কারণে অনেক সাধনা করেও কাঙ্খিত সফলতা পাইনা।
আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের ভুল গুলো বুঝা যায়। আপনি যদি সফল ব্যক্তিদের লক্ষ্য করেন তবে দেখবেন যে, তারা কখনই অন্যকে নিয়ে মাথা ঘামায় না বা সময় নষ্ট করে না। শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তারাই কাঙ্খিত সফলতা পায়।
▷ পড়ুনঃ নিজের সম্পর্কে ১০ টি বাক্য বাংলায়।
যাইহোক, কিভাবে নিজেকে নিয়ে সমালোচনা করবেন এবং কেউ যদি আপনার সমালোচনা করে বেড়ায় তবে সেই ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি হবে তা আপনাকে আমি বলে দিচ্ছি। কিভাবে নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করতে হয় চলুন জেনে নিই।
নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করুন
ইতোমধ্যেই বলেছি নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করাকে “আত্মসমালোচনা” বলা হয়। অর্থাৎ, নিজের দোষ-ক্রটি নিজেকেই খুঁজে বের করা। এটি করার জন্য বেশকিছু উপায় রয়েছে। যেমন –
- নিজেকে প্রশ্ন করুন “আমি কি ভুলের উর্ধ্বে? অর্থাৎ আমার কি কোনো ভুল নেই?
- আজ আমি যার সমালোচনা করছি, সে যদি ঠিক এভাবেই আমার সমালোচনা করে বেড়াতো, তবে আমি কি কষ্ট পেতাম না?
- (আমি মানুষ, নিশ্চই আমার ভুল আছে,) আমি আমার ভুল গুলো থেকে কতটুকু মুক্ত হতে পেরেছি?
আপনি যদি এই তিনটি প্রশ্ন নিজেকে করেন, তবে দেখবেন যে আপনার মাঝে নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করার একটি অনুভূতি জাগ্রত হবে। যেই অনুভূতি আপনাকে মানুষের প্রতি ভালোবাসার জন্ম দেবে।
আমি-আপনি সকলেই জানি, সমালোচকদের কেউ ভালোবাসে না। এমনকি আমি-আপনি কেহই না। আজ যদি কেউ আমার সমালোচনা করে, তবে নিশ্চই আমি সমালোচককে শত্রুর মতো দেখবো, ঘৃণা করবো। এটাই স্বাভাবিক। ঠিক তেমনী অন্যের সমালোচনা করতে যেয়ে আমার বেলাও তো ঠিক এমনটাই ঘটে।
▷ পড়ুনঃ কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ।
তাছাড়া, সমালোচনা করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমাদের কেউ যেনো কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। (-সূরা আল-হুজরাত -১২)। হাদিসে হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সে ব্যক্তি ঈমানদান নয়, যে সর্বদা পরনিন্দা করে বেড়ায়। -তিরমিযী।
নিজের আত্মসমালোচনা করার কৌশল
নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করা বা আত্মসমালোচনা বৃদ্ধির জন্য এবং নিজের ভুল গুলো খুঁজে বের করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য কিছু কাজ করা জরুরি। যেমন –
- সারাদিন আমি কি কি কাজ করেছি, কার সাথে মিশেছি, কাকে কষ্ট দিয়েছি, আজ কিভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছি ইত্যাদি সবকিছই রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবা।
- নিয়মিত রোজনামচা লেখা। অর্থাৎ, সারাদিনের কর্মকাণ্ড গুলো খাতা বা ডায়েরিতে লেখা।
এই দুটি কাজ আমি নিজের করতে চেষ্টা করি, এবং আপনাদেরকেও করতে পরামর্শ দেই। কারণ, আমি নিজেই এই কাজগুলো করে উপকার পেয়েছি।
সারা দিনের কর্ম গুলো রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবা এবং রোজনামচা লেখার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, আপনার মধ্যে কি কি ভুল বা দুর্বলতা রয়েছে। যেগুলোর কারণে আপনি এখনো পিছিয়ে রয়েছেন।
অন্যের সমালোচনা এড়িয়ে যাওয়ার সুফল
আপনি নিজে যখন অন্যের সমালোচনা থেকে বেরিয়ে আসবেন, তখন নিশ্চই মনে রাখবেন আপনি একটি ভালো কাজ করছেন। কেউ যদি আপনার সমালোচনা করে তবে ধৈর্য্য ধরুন। কখনই প্রতিবাদ করতে যাবেন না।
সমালোচনা মানে অন্যের ক্ষতি নয়। প্রকৃত অর্থে সমালোচনা নিজেরই ক্ষতি বয়ে আনে। সমালোচনার ৫ টি ক্ষতি রয়েছে। যেমন –
- দোয়া কবুল হয় না।
- আমলনামা থেকে নেকি কমে যায়।
- আমলনামায় পাপের পরিমাণ বেড়ে যায়।
- পূণ্য কর্ম সমূহ কবুল হয় না।
- কিয়ামতের দিন নিজের গোশত নিজেই ভক্ষণ করবে।
এজন্য সমালোচনা কখনও করতে নেই এবং কেউ সমালোচনা করলে ধৈর্য্যের সাথে তাকে এড়িয়ে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সাথে একটি বাস্তবতা শেয়ার করি। –
▷ পড়ুনঃ আলিম ক্লাসের বইয়ের তালিকা।
বাংলাদেশের একজন সমালোচিত ব্যক্তি “হিরো আলম” যার সমালোচনা সমাজের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনের মানুষই করে থাকে। কিন্তু সেই কখনই কারো সমালোচনায় কান দেন না। আপনি যদি কোমল ভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করেন, তবে দেখবেন যে সেই আজ সত্যিই সফল!
তবে তার সব কাজগুলোই যে প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার তা কিন্তু নয়। তিনি সমালোচনা এড়িয়ে যাওয়ার কারণে যে আজ প্রতিষ্ঠিত তা অস্বীকার করার কিছু নেই। যাইহোক-
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আমি আশাকরি এই নিবন্ধটি থেকে আপনি জানতে পেরেছেন নিজের সম্পর্কে সমালোচনা কিভাবে করতে হয় এবং অন্যের সমালোচনা এড়িয়ে চলার সুফল সম্পর্কে। আশাকরি, আপনারা উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।