নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?

নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?
Written by IQRA Bari

আমরা মুসলমান। এই হিসেবে নামাজ আমাদের ওপর ফরজ একটি ইবাদত। এই ইবাদতের করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী রয়েছে। যা আমাদেরকে জানতে হবে, সেইসাথে আমলও করতে হবে। নামাজের মাঝে এমনই কিছু ওয়াজিব রয়েছে, যা সঠিক ভাবে আদায় না করলে নামাজে পূর্ণতা পাবে না।

অনেকক্ষেত্রে গোনাহগার হওয়ারও আশংকা আছে। তাই আমাদেরকে নামাজের ওয়াজিব সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। চলুন জেনে নিই নামাজের ওয়াজিব কয়টি এবং কি কি।

নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি

ওয়াজিব মানে আবশ্যক বা অত্যাবশ্যক, যা না করলেই নয়। সাধারণ ভাবে আমরা অনেকেই সংক্ষিপ্ত রূপে নামাজ এর ওয়াজিব ৩/৪ টি পড়েছি বা জেনেছি।

তবে এগুলোর বাহিরেও আরো ছোট ছোট বেশকিছু ওয়াজিব রয়েছে, যা আমাদের অনেকেই জানিনা। তাই আমরা নামাজের ওয়াজিব ছোট-বড় একটাও বাদ দেইনি। চেষ্টা করেছি নামাজের সকল ওয়াজিব গুলো তুলে ধরার জন্যঃ

() তাকবিরে তাহরিমা শুধু “ আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করা। (আল্লাহু আকবার এর সমর্থবোধক কোনো শব্দ বললে ওয়াজিব তরক হবে।)

আরও পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত

(২) প্রত্যেক নামাজে তাকবিরে তাহরিমার পর  সূরা ফাতিহা পূর্ণ পড়তে হবে।

(৩) ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে এবং অন্যান্য নামাজের সব রাকাতেই সূরা ফাতিহা একবার পাঠ করা ওয়াজিব।

(৪) সূরা ফাতিহা পড়ার পর ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে এবং অন্যান্য নামাজের সব রাকাতে কমপক্ষে তিন আয়াত পরিমাণ পাঠ করতে হবে।

(৫) প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। তারপর অন্য সূরা মিলাতে হবে। কেউ যদি অন্য সূরা আগে পড়ে এবং সূরা ফাতিহা পড়ে পাঠ করে তবে ওয়াজিব আদায় হবে না।

(৬) ফরজ নামাজের প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে কেরাত পাঠ করা।  তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে কিরাত পাঠ করলে ফরজ আদায় হলেও ওয়াজিব আদায় হবে না। (দুরদে মূখতার, মারাফিল ফালাহ)

(৭) রুকু হবে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ওয়াজিব।

(৮) উভয় হাত, হাঁটু, উভয় পা এবং নাক সেজদার সময় মাটিকে রাখা ওয়াজিব। (মারফিল ফালাহ)

আরও পড়ুনঃ নামাজে একই সূরা দুই রাকাতে পড়ার মাসআলা

(৯) দ্বিতীয় সেজদা প্রথম সেজদার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করা। সুতরাং দ্বিতীয় সেজদার পূর্বে দাঁড়িয়ে গেলে ওয়াজিব তরক হবে। (শামী)

(০) রুকু এবং সেজদায় এই পরিমাণ সময় বিলম্ব করতে হবে, যাতে একবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম বা সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’  বলা যায়। (তাহতাবী, মারাফিল ফালাহ)

(১১) দুই সেজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা ওয়াজিব।

(১২)  রুকুর পরে দাঁড়ানো এবং দুই সেজদার মাঝে কমপক্ষে এক তাসবিহ পরিমাণ সময় বসতে হবে। (মারাফিল ফালাহ)

(৩) দ্বিতীয় রাকাতে সেজদার পরে প্রথম বৈঠক করা।

(৪) প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পরিমাণ বসা।

(৫) নামাজের উভয় বৈঠকে একবার তাশাহুদ পড়তে হবে। কেউ যদি তাশাহুদ না পড়ে বা দুই পড়ে তবে ওয়াজিব তরক হয়ে যাবে।

(৬) নামাজে নিজের পক্ষ হতে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা ফরজ বা ওয়াজিব আদায়ে বিলম্বের কারণ হয়। (দুরদে মুখতার, শামী)।

উদাহারণতঃ

  • (ক) সূরা ফাতিহার পরে লম্বা সময় চুপ থাকা। এতে করে অন্য সূরা মিলাতে দেরি হয়ে যাবে।
  • (খ) একই সাথে দুই রুকু করলে দ্বিতীয় রুকু সেজদার জন্য বিলম্বের কারণ হবে।
  • (গ) প্রথম বা তৃতীয় রাকাতের শেষে বেশি সময় বসলে দ্বিতীয় এবং চতুর্থ রাকাতের কিয়াম বিলম্ব হয়ে যাবে।
  • (ঘ) একসাথে তিন সেজদা করা। এতে করে তৃতীয় সেজদা কিয়াম বা বৈঠকের জন্য বিলম্বের কারণ হবে।

(৭) বিতরের নামাজে তৃতীয় রাকাতে দোয়া পড়তে হবে। যেকোনো দোয়া পড়লেই হবে। তবে দোয়া কুনুত পড়লে ওয়াজিবের সঙ্গে একটি সুন্নত পালন হয়ে যাবে।

(৮) ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির বলা।

(৯) ঈদের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবির বলা ওয়াজিব।

আরও পড়ুনঃ নামাজের নিষিদ্ধ সময় সমূহ

(২০) ফজরের নামাজের উভয় রাকাতে, মাগরিব এবং এশার নামাজের প্রথম দুই রাকাত, কাযা হোক বা আদায়, জুম’আ, ঈদ, তারাবি এবং রমজানের বিতর নামাজে ইমামের জন্য কিরাত উচ্চস্বরে পাঠ করা ওয়াজিব।

(২) যোহর এবং আসরের নামাজের সকল রাকাতেই কিরাত আস্তে পড়া।

(২২) দিনের বেলায় নফল নামাজে আস্তে কেরাত পড়া। রাতের বেলা নফল নামাজে উচ্চস্বরে বা আস্তে/নিবরে যে কোনো ভাবে কিরাত পড়তে পারবে। (মারাফিল ফলাহ)

(২৩) মুনফারিদ দিনের বেলা ফজর, মাগরিব ও এশার কাযা নামাজে আস্তে কেরাত পড়া উচিত। রাতের বেলা কাযা নামাজ আদায় করলে উভয় ভাবে কিরাত পড়ার সুযোগ আছে।

(২৪) মাগরিব ও এশার প্রথম দুই রাকাতে কিরাত পড়তে ভুলে গেলে তৃতীয় ও চতুর্ত রাকাতে সূরা ফাতিহার পর কিরাত পড়া উচিত। তখনও উচ্চস্বরে কিরাত পড়তে হবে।

(২৫) ’আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে নামাজ শেষ করতে হবে।

(২৬) ’আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ দুইবার বলতে হবে। ( ইলমুল ফিকহ: ২/৬৪, হেদায়া : /৭৩)

নামাজের ওয়াজিব তরক এর মাসআলা

(১) মাসআলা: ওয়াজিব তরক করলেও নামাজের ফরজ আদায় হয়ে যায়। তবে নামাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

(২) নামাজে ভুলক্রমে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে প্রথম সালাম ফেরানোর পর সেজদায়ে সাহু করার দ্বারা ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়।

(৩) ইচ্ছাকৃত কোনো ওয়াজিব তরক করলে পুনরায় নামাজ আদায় করা ওয়াজিব।

ডাউনলোডঃ পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষা বই pdf 

(৪)  ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়া মাকরূহে তাহরিমী। মাকরূহে তাহরিমীর দ্বারা গোনাহ হয়।

(৫) মাকরূহে তাহরিমীর সাথে নামাজ আদায় করলে সে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব হয়ে যায়। ( নামাজে মাসনুন : ৩০৩, কিতাবুল ফিকহ: /৩৭৯)

(৬) ওয়াজিব অস্বীকারকারী ফাসেক এবং ফরজ অস্বীকারকারী কাফের।

আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথাঃ

ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল ইত্যাদি প্রত্যেক নামাজেরই ওয়াজিব রয়েছে। কেউ যদি নামাজের কোনো ওয়াজিব অস্বীকার করে, তবে সে হাদিসের ভাষায় ফাসেক।

আর যদি কেউ নামাজের কোনো ওয়াজিব ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেড়ে দেয়, তবে তার উক্ত নামাজ পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। হোক সেটা নফল নামাজ।

তবে ভূলক্রমে যদি কারো নামাজের কোনো ওয়াজিব বাদ পড়ে যায় এবং নামাজ অবস্থাতেই বিষয়টা সে উপলদ্ধি করতে পারে, তবে তাকে সাহু সেজদাহ করতে হবে। সাহু সেজদার মাধ্যমে নামাজের সকল ওয়াজিব এর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। তবে নামাজের কোনো ফরজ ছুটে গেলে নামাজ অবশ্যই বাতিল হয়ে যায়।

আশা করছি, নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি এই বিষয়ে সকলেই অবগত হতে পেরেছেন, সেই সাথে নামাজ শিক্ষার এই পর্বটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে।

যদি এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করুন। শেয়ার করে অশেষ সওয়াবের অংশীদার হোন। জাযাকুমুল্লাহ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!