কিয়ামতের আলামত: কিয়ামত হলো মহা-প্রলয় বা গোটা ইউনিভার্স ধ্বংসের নিদৃষ্ট একটি দিনকে বুঝায়। যা অবশ্যই ঘঠবে। একথা অকাট্য সত্য যে, মহান আল্লাহ তা’য়ালার আদেশে হযরত ইসরাফিল আ. সিংগায় ফুৎকার দেবেন এবং সে ফুৎকারের অপরসীম শক্তির কম্পনে গোটা ইউনিভার্স ধ্বংসের মুখে পতিত হবে।
মহা-প্রলয় কখন সংগঠিত হবে সৃষ্টজীব কখনই এটা বলতে পারে না। এই বিষয়ে কেবল মহান আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য।
কিয়ামতের আলামত সমূহ
মহা-প্রলয়ের আগে সৃষ্টজীবের মাঝে স্রষ্টার নাফরমানি খুব তীব্রতর হবে। এমন অবস্থা হবে যে প্রায় মানুষই স্রষ্টার কথা একবারেই ভুলে যাবে। তখন অন্যায়, ব্যবিচার, নিপীড়ন এবং পাপাচারে মানুষ লিপ্ত হয়ে যাবে। স্রষ্টার মনোনীত ধর্ম ইসলামের ছায়া থেকেও মানুষ অনেক দূরে সরে যাবে। চতুর্দিকে অধর্ম এবং বদ-দ্বীনি ও বে-দ্বীনি শুরু হয়ে যাবে। তখনই মূলত কিয়ামত বা মহা-প্রলয় ঘঠবে।
কিয়ামতের আলামত কি কি
কিয়ামতের ছোট বড় অনেক আলামত রয়েছে। কুরআন -হাদিসের ভাষায় কিয়ামতের আলামতকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়।
- কিয়ামতে ছুগরা
- কিয়ামতে কুবরা
(১) কিয়ামতে ছুগরা
কিয়ামতে ছুগরা হলো ছোট ছোট আলামত। এই আলামত গুলো ইতোমধ্যেই সমাজে বিদ্যমান। কিয়ামতে ছুগরার মধ্যে রয়েছে:
- সমাজে শোষন, জুলুম, অন্যায়, জেনা, ব্যবিচার বেড়ে যাবে।
- প্রতিবেশীর হক্ব নষ্ট করা হবে।
- নারীরা পুরুষের মতো চলাফেরা করবে।
- পুরুষরা নারীদেরকে সব দায়িত্ব দিয়ে দেবে।
- সুদ-ঘোষের মতো পাপ বেড়ে যাবে।
- এক মুসলিম আরেক মুসলিমকে বিনা অপরাধে হত্যা করবে।
- মুসলিমদের মাঝে অনৈক্য বেড়ে যাবে।
- আলেমদেরকে সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক বলা হবে।
- বেশী বেশী ভূমিকম্প হওয়া।
- মেয়েদের পর্দা ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি।
এগুলো ছাড়াও কিয়ামতে ছুগরার আরো হাজার হাজার আলামত রয়েছে।
(২) কিয়ামতে কুবরা
কিয়ামতে কুবরা হলো কিয়ামতের বড় বড় আলামত। যা খুব সহজেই প্রকাশ হয়না। কিয়ামতে কুবরার মধ্যে রয়েছে:
- সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ স. এর আবির্ভাব।
- দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ।
- হযরত ঈসা আ. এর অবতরণ।
- হযরত ইমাম মাহাদী আ. এর আত্মপ্রকাশ।
- দাব্বাতুল আরদের আত্মপ্রকাশ।
- ইয়াজুজ মাজুজের মুক্তি।
- আকাশ কালো ধোয়ায় চেয়ে যাওয়া।
- পশ্চিম দিকে সূর্য উদয়।
- শিংগায় ফুৎকার ইত্যাদি।
এগুলো ছাড়াও কিয়ামতে কুবরার আরো আলামত রয়েছে।
তখনই আকাশের বুকে একপ্রকার ধোঁয়ার মতো দেখা দেবে। এই ধোঁয়া পৃথিবীতে আসবে এবং ছড়িয়ে যাবে। এই ধোঁয়ার কারণে মুমিন মুসলমানদের এক প্রকার সর্দির মতো ভাব হবে। আর কাফেরেরা বেহুঁশ হয়ে যাবে। এই ধোঁয়া পৃথিবীতে ৪০ দিন পর্যন্ত থাকবে তারপর বিলীন হয়ে যাবে।
অতঃপর পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয় হবে এবং পশ্চিমেই অস্তমিত হবে।
আকাশের ধোঁয়া বিলীন হওয়ার কিছুদিন যেতেই হঠাৎ একদিন জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখের পর একটি রাত এতো লম্বা হবে যে সবাই অস্থির হয়ে উঠবে। ঘুমাতে ঘুমাতে পরিত্যক্ত হয়ে যাবে সবাই। গবাদিপশু বাহিরে যেয়ে ভক্ষণ করার জন্য চিৎকার করতে থাকবে। তবুও প্রভাত হবে না। সমস্ত মানুষ পেরেশান হয়ে যাবে। এভাবে যখন তিনরাত পরিমাণ সময় অতিবাহিত হবে, তখন সূর্য গ্রহণের মতো সামান্য আলো নিয়ে পশ্চিম দিকে উদয় হবে। তখন আর কারো ঈমান বা তাওবা কবুল হবে না। সূর্য সাধারণতঃ দুপুরের পূর্ববর্তী সময়ে যেখানে থাকে সেই পর্যন্ত উঠে মহান আল্লাহর হুকুমে আবারো পশ্চিমে অস্তমিত হবে। তার পর থেকে আবারো পূর্বের মতো নিয়মিত সূর্য উঠবে এবং আলো ছড়াবে।
তার কিছুদিন পর দাব্বাতুল আরদ তথা অদ্ভূত জন্তুর আত্মপ্রকাশ ঘঠবে।
মক্কার জমিনে প্রচণ্ড এক ভূমিকম্প শুরু হবে, সে ভূমিকম্পে মক্কা শরীফের ছাফা পাহাড় ফেটে যাবে এবং তথা হতে আশ্চর্য ছুরতের এক অদ্ভূত জন্তু বের হবে। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। তার চলার গতি অতি দ্রুত হবে, অল্প সময়ের মধ্যেই সারা পৃথিবী ঘুরে আসতে পারবে। সে হযরত মূসা (আ.)-এর ’আছা’ (লাঠি) দ্বারা মুুু’মিনগণের কাপালে একটি নূরানী রেখা টেনে দেবে। এতে করে মুুু’মিনগণের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যাবে। বেঈমানদের নাকের অথবা গর্দানের উপর হযরত সোলাইমান (আ.) এর আংটির দ্বারা সীলমোহর দিয়ে দেবে। এতে করে বেঈমান কাফেরদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে। এসমস্ত কাজ করে সে আল্লাহর আদেশে গায়েব হয়ে যাবে।
“দাব্বাতুল আরদ” এটিও একটি অদ্ভূত জন্তু। সে ৬০ হাত লম্বা হবে। তার চার পা এবং সর্বশরীরে হলুদ বর্ণের পশম হবে! তার দুটি বাহু থাকবে। এত দ্রুতবেগে চলবে যে পাখিরাও তার মতো চলতে পারবে না। মাথা হবে গরুর মাথায় ন্যায় এবং শিং হবে গরুর শিংয়ের মতো। শকুনের চোখের মতো চোখ হবে, গর্দান ও ঊরু উটের ন্যায় হবে। বন্য হাতীর কানের মতো হবে কান, বাঘের বংয়ের মত রং এবং বাঘের ছিনার মতো ছিনা হবে। লেজ হবে দুম্বার লেজের মত। সে দেখতে অনেক অদ্ভূত আকারের হবে।
পড়ার সাজেশনঃ
► আরবিল নামক এক অত্যাচারি মহিলা
► মুসলিম হিসেবে সুন্দর মনের প্রয়োজনীয়তা
কিয়ামতের আলামত নিয়ে চমৎকার আলোচনা
অনেক ধন্যবাদ