আরবিল নামক এক অত্যাচারি মহিলা

আরবিলের কাহিনী
Written by IQRA Bari

প্রিয় পাঠক, আশাকরি স্রষ্টার অশেষ কৃপায় আপনি ভালো আছেন। আজ আমরা চমৎকার একটি ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প পাঠ করবো। যেই গল্পটি হযরত ইলিয়াস নবীর সময়কালের। গল্পটির নাম আরবিলের কাহিনী। গল্পটির মূল ম্যাসেজ হলো জুলুমের করুণ পরিণতি।

আরবিল নামক অত্যাচারি মহিলা

আরবিল ছিল এক যালেম বাদশার স্ত্রী। সে নিজেও ছিল বড়ই নির্দয়, বেরহম মহিলা । অনেক পয়গম্বর ও আল্লাহর অলীদের কে সে জুলুমের মাধ্যমে হত্যা করেছে।

আরবিলের এক প্রতিবেশীনী ছিল ঈমানদার সৎচরিত্রা মুমিনা মহিলা। তার ছিল মনোরম তরতাজা এক সুন্দর বাগিচা। একদা যালেম বাদশার স্ত্রী আরবিলের লোভ হলো যেভাবেই হোক কৌশলে বাগানটি হস্তগত করতেই হবে। আর বাগানটি হাতের মুঠোয় আনতে হলে উক্ত নেক্কার মহিলাকে হত্যা করে ফেলতে হবে। এখন তাকে হত্যা করার উপায় কি?

ঘটনাচক্রে বাদশাহ্ একবার বিদেশে ভ্রমণে বাহির হলো। রাজ্যভার ছেড়ে গেলো স্ত্রীর হাতে। সুযোগ বুঝে বাদশাহর স্ত্রী (আরবিল) বাগানের মালিনীকে হত্যা করার ফন্দী আটল। মালিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য দুইজন লোক ঠিক করলো।

বাগানের মালিনীকে রাজ দরবারে ডাকা হলো। জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি নাকি বাদশার নামে বদনাম ছড়াচ্ছো? গালিগালাজ করেছো? মহিলাটি বিস্মিত হয়ে অস্বীকার করলো। বাদশাহর স্ত্রী মিথ্যাবাদী নকল সাক্ষ্যদাতাদ্বয়কে রাজ দরবারে হাজির করলো।

তারা বলল: হ্যাঁ, সত্যিই সে বাদশার নামে বদনাম ও গালিগালাজ করেছে। অতঃপর বাদশাহর স্ত্রী আরবিল নেক্কার মহিলাটিকে নির্মম ভাবে হত্যা করল।তারপর আরবিল বাগানটি নিজের মালিকানাভূক্ত করে নিলেন। কিছুদিনপর বাদশা সফর শেষ করে ফিরে আসলো।

আল্লাহ্ তা’আলা এরইমধ্যে হযরত ইলিয়াস (আঃ) -এর নিকট ওহী নাযিল করলেন। “হে নবী! বাদশাহ্ কে বলে দিন, তার স্ত্রী এক নির্দোষ বান্দাকে হত্যা করে তার বাগিচা দখল করেছে। বাদশা যদি উক্ত বাগান তার ওয়ারিশদেরকে ফিরিয়ে দেয় এবং উভয়ে মিলে তওবা করে, তবে রক্ষা পাবে, নতুবা তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলা হবে!

হযরত ইলিয়াস (আঃ) এই সংবাদ বাদশাকে প্রদান করলেন। বাদশা ও স্ত্রী উভয়েই এই সংবাদকে কর্ণপাত না করে বরং হযরত ইলিয়াস (আ.) কে দুশমন মনে করল। এদিকে আল্লাহ্ তা’আলা হযরত ইলিয়াস (আ.) কে রাজ্য ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে আদেশ করলেন। আদেশ পাওয়া মাত্রই তিনি রাজ্য ছেড়ে চলে গেলেন।

কিছুদিন পর যালেম বাদশাহর এক আদরের ছেলে ভীষণ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ ত্যাগ করলো। এই দুঃখে বাদশাহ্ ও স্ত্রী অনেক মর্মাহত হলো। কয়েকদিন পরই আবার এক প্রবল প্রতাপশালী বাদশাহ্ এসে তার রাজ্য ছিনিয়ে নিল এবং তাকে সবংশে হত্যা করলো। এইভাবেই যালেম বাদশাহর সকল গর্ব অহংকার চূর্ণ-বিচূর্ণ হলো এবং সে সমূলে ধ্বংস হলো।

গল্প থেকে শিক্ষাঃ

দুনিয়ার ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। জালেমের গর্ব ও অহংকারের উপযুক্ত শাস্তি জীবদ্দশায় ভোগ করতে হয়। ওদের শাস্তি বড়ই ভয়ানক ও মর্মান্তিক। যারা মানুষের সম্পদ লুটে নেয়, যারা নির্দয়, নির্মমভাবে হত্যা করে এবং যারা অহংকারী ও অত্যাচারী মানব, ওরা কখনই কারো মনে স্থান পায় না।

হয়ত সাময়িক সময়ের জন্য তারা এই পৃথিবীতে রাজস্ব কায়েম করে এবং সুখে শান্তিতে বসবাস করে। তবে পরকালে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাকর আজাব, যা তারা প্রতিহত করতে পারবে না। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই ইসলামিক গল্পটি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমাদের ক্ষমা করুন। আমিন।

মূল লেখকঃ হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহ.)
কিতাবঃ বেহেশতি জেওর।
গল্পটি মূল কিতাবের অনুসরণে লিখেছেনঃ নাজিরুল ইসলাম নকীব।

Leave a Comment

error: Content is protected !!