আমাদের অনেকের অভ্যাস হলো ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করা। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, ঘুমানোর আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা এবং না করার সাথে হৃদরোগের কারণ জড়িয়ে আছে। বিজ্ঞান এক পর্যায়ে প্রমাণও করেছে যে, অপরিস্কার দাঁত হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রতিদিন কমপক্ষে দু’বার দাঁত ব্রাশ না করলে হৃদরোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ১৯ শতকেই বলা হয়েছিল মুখের স্বাস্থ্যের সঙ্গে মারাত্মক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান এর প্রমাণও করতে সক্ষম হয়েছে।
দাঁতের সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক নিয়ে গবেষাণার ফলাফল প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়েছিল ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল -এ। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা স্কটল্যান্ডের প্রায় ১২ হাজার প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ওপর এই গবেষণা চালিয়ে ছিলেন।
গবেষণায় লক্ষ্য করেন যে, দাঁত এবং মুখের পরিচর্যার ক্ষেত্রে যারা উদাসীন বা কম মনোযোগী, তাদের ক্ষেত্রে ৭০ গুণ পর্যন্ত হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
অন্যদিকে যারা প্রতিদিন কমপক্ষে দুইবার দাঁত ব্রাশ করে, তাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ এর ঝুঁকি অনেক কম। এই গবেষণায় ৬২ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন। অবশ্য তারা জানিয়েছেন যে, প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর দাঁতের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েছেন। এছাড়াও, তাদের ৭১ শতাংশই প্রতিদন দুইবার দাঁত ব্রাশ করেন বলে জানান।
আরও পড়ুনঃ হার্টের শত্রু লবন! লবনের অপকারিতা।
মুখের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যারা কম মনোযোগী তাদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, তাদের রক্তে সি-রিঅ্যাক্টিভ পোটিন এবং ফিব্রিনোজেন নামক দুটি উপাদান পাওয়া গেছে।
এগুলো মানব দেহের অভ্যন্তরে ক্ষত সৃষ্টির জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী। এই গবেষণাটি চালিয়ে ছিলেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের রিসার্চ ওয়াটের নেতৃত্বে।
ওয়াট বলেন, বিশেষ করে যাদের দাঁতের মাড়িতে অসুখ রয়েছে, তাদের হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশী। ওয়ার আরও বলেন, নিয়মিত দাঁত পরিস্কার না করার কারণে হৃদরোগ এর ঝুঁকি ৭০ গুণ বাড়লেও এরচেয়ে বেশী ভয়ঙ্কর হলো ধুমপান।
ধুমপানে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৩৫ শতাংশ। মানব দেহে এর চেয়ে বড় ঝুঁঁকি আর কিছুই তৈরি করতে পারে না। এজন্য ধূমপানকে পুরোপুরি ভাবে ’না বলতে হবে’।
মুখের সঙ্গে যে সারা দেহেরই রোগের সম্পর্ক রয়েছে, তা ১৯ শতক থেকেই মানুষ বিশ্বাস করতো। তখন কারো দাঁতে রোগ দেখা দিলে সরাসরি দাঁতুলে ফেলতো।
কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত হওয়ার কারণে নিয়মিত দাঁশ ব্রাশ করার কথা বলছে। এতে করে দাঁতের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। তবে এই বিষয়টাই আজ থেকে প্রায় ১৫শ বছর আগে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য একটি বিষয় হলো, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ২০০৫ সালে ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে রোগাক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের এক-তৃতীয়াংশই হৃদরোগে মারা গেছেন।
হৃদরোগ থেকে বাঁচার উপায়
হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে দাঁত পরিস্কারের পাশাপাশি ধূমপান থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। কারণ, আমরা সকলেই জানি ধূমপানের কারণে হৃদরোগ হয়।
ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি যে, দাঁত পরিস্কার না করার কারণে হৃদরোগ এর ঝুঁকি ৭০ গুণ পর্যন্ত বাড়লেও ধুমপানে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়।
কেউ যদি শুধু দাঁত পরিস্কারের দিকেই মনোযোগী হয়, আর অন্যদিকে ধূমপান ছাড়তে না পারে তাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা সকল মানুষকেই ধুমপান থেকে বেঁচে থাকার পরামর্শ দেয়।
এমনকি বিড়ি-সিগেরেটের প্যাকেটের গায়েও এমন সতর্কবাণী লিখে দেওয়া হয়। আপনি যদি হৃদরোগ হতে সুরক্ষিত থাকতে চান, তবে এই পরামর্শ গুলো আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় যেসব খাবার
আমাদের প্রতিদিনের খাবারে কিছু জিনিস রাখতে পারি। বিশেষজ্ঞদের মতে যেই খাবর গুলো হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমাতে পারে। আমি এমনই কিছু খারারের নাম নিচে উল্লেখ করেছি।
- সবুজ সবজি
- রসুন
- কমলা
- বাদাম
- বেরি
- কালো চকলেট
- মাশরুম
- টকদই
- বীজ জাতীয় খাবার
- ওটমিল
- গ্রীন টি
- সামুদ্রিক মাছ।
এই খাবার গুলো হৃদরোগ এর ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের হৃদরোগ এড়াতে নিয়মিত খাবারের তালিকায় উপরোল্লিখিত খাবার গুলো রাখা জরুরি।
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক, হৃদরোগ হতে সুরক্ষিত থাকার উপায় হলো দাঁত পরিস্কার রাখা, ধূমপান ছেড়ে দেওয়া এবং নিয়মিত খাবারের তালিকায় পুষ্টিজাতীয় হৃদরোগের খাবার ভক্ষণ করা।
স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার জন্যে সচেতনতা খুবই জরুরি বিষয়। আমাদের মধ্যে যারা এখনো এই ভংঙ্কর রোগ থেকে বেঁচে আছি, তারা নির্দ্বীধায় স্রষ্টার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
দাঁত পরিস্কারের জন্য আমরা মেসওয়াক ব্যবহার করতে পারি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহও বটে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে ১ বার মেসওয়াক করা অনেক সওয়ারেব কাজ। হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতেও এটি বিশেষ ভাবে কার্যকরী।