সূরা ইয়াসিনকে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের হৃদয় বলা হয়। বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে মুফাচ্ছিরগণ এই বিষয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত সম্পর্কেও বিভিন্ন হাদিসে বর্ণনা পাওয়া যায়।
সূরা ইয়াসিন মূলত পবিত্র কুরআন এর ৩৬ তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৮৩ টি এবং রুকুর সংখ্যা ৫ টি। এই সূরাটি পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরাটি ‘ইয়াসিন’ নামে প্রসিদ্ধ। প্রথম আয়াত থেকে সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে। এক হাদিসে সূরাটিকে ‘আয়ীমা’ বলা হয়েছে এবং অপর হাদিসে ”মুদাফিয়াও” ও “কাযিয়া” বলে উল্লেখ রয়েছে।
সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত
সূরা ইয়াসিনের ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদিসটি বর্ণনা করা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক জিনিসের একটা কলব আছে। সূরা ইয়াসিন হলো কুরআনের কলব। যে এই সূরাটি একবার পাঠ করবে তার আমল নামায় দশবার কুরআন খতমের ছওয়াব নির্ধারণ করা হবে। ( জামে আত তিরমিজি)।
- আরো পড়ুনঃ শুক্রবারের আমল ও ফজিলত
সুনানে আদ-দারেমী শরীফ থেকে পাওয়া যায়, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হাদিসটি বর্ণনা করেন, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা আসমান এবং জমিন সৃষ্টির এক হাজার বছর পূর্বে ফেরেশতাদের সামনে সূরা ত্বাহা এবং সূরা ইয়াসীন পাঠ করলেন। তখন ফেরেশতারা তা শুনে বললেন, ধন্য সে জাতি যাদের প্রতি তা নাযিল হবে, ধন্য সেই বক্ষ যে তা ধারণ করবে এবং ধন্য সেই মুখ যে তা উচ্চারণ করবে।
হাদিস শরীফে আছে, কেউ যদি রাতে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করে নিদ্রায় যায় সকালে সে নিষ্পাপ অবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হবে। এবং সদা সর্বদা তিলাওয়াত করলে তিলাওয়াত কারীর জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে ক্ষমার সুপারিশ করবে।
সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যে এ সূরা পড়বে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খোলা থাকবে। (সুবহানাল্লাহ!)
মহান আল্লাহ এই বরকতময় সূরাটি তিলাওয়াতের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের শেফা দিয়েছেন। বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির সুস্পষ্ট নিদর্শন সূরা ইয়াসিনে বিদ্যমান।
- আরো পড়ুনঃ কিয়ামতের আলামত
কেউ যদি সকাল সন্ধ্যায় সূরা ইয়াসিন পাঠ করে তবে তার সমস্ত কাজ বা পথচলা সহজ হয়। পাগল বা জিনগ্রস্থ কারোর উপর সূরা ইয়াসিন পাঠ করে ফুক দিয়ে আল্লাহর রহমতে আরোগ্য লাভ হবে।
বিশেষ কোনো মকসূদ হাসিলের জন্য এই সূরা নিয়মিত পাঠ করলে মকসূদ হাসিল হয়। রোগী বা বিপদগ্রস্তদের জন্য এই সূরা তিলাওয়াতে বিশেষ ফায়দা লাভ হয়।
মুমূর্ষ ব্যক্তির কাছে বসে সূরাটি তিলাওয়াত করলে মৃত্যুর কষ্ট লাঘব হয় এবং কবরের কাছে পড়লে কবরে শায়িত ব্যক্তির গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
সূরা ইয়াসিন আরবি pdf
আমরা অনেকেই সরাসরি সূরা ইয়াসিন আরবি উচ্চারণে পড়তে পাড়িনা। এজন্য অনেকের সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করার ইচ্ছে থাকলেও পড়ার সুযোগ হয় না।
তাদের জন্য সূরা ইয়াসিন বাংলা উচ্চারণসহ একটি pdf বই আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আমরা কেহেই যেনো সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত এর ছওয়াব থেকে বঞ্চিত না হই।
আমাদের দেওয়া pdf বইটিতে সূরা ইয়াসিন এর শানে নুযুল রয়েছে। তাছাড়া এই pdf বইটিতে সূরা ইয়াসিন সম্পূর্ণ এবং সুস্পষ্ট। তাই পড়তে আপনার সুবিধা হবে।
ডাউনলোড করুনঃ সূরা ইয়াসিন আরবি (বাংলা উচ্চারণসহ) pdf
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক, সূরা ইয়াসিনকে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের ক্বলব (হৃদয়) বলা হয়েছে। এই সূরা নিয়মিত তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনেক উপকারিতা রয়েছে।
সবকিছুর উর্ধ্বে হলো নিয়ত ও আল্লাহর প্রতি একান্ত বিশ্বাস! যেকোনো কাজ করার আগে সহিহ নিয়ত ও বিশ্বাস থাকা চাই। মহান আল্লাহ্ হলেন দু’জাহানের বাদশাহ। আহকামুল হাকীমিন। পরাক্রমশালী ও দয়াময়। পৃথিবীর বুকে কোনো মানুষ বা কোনো জাতি কখনই ‘দয়াময়’ নয়। দয়াময় একজন, যিনি সমস্ত মাখলুকাতের রাজ্জাক। তিনি আল্লাহ! যার কাছে চাইলে তিনি খুশি হয়।
সূরা ইয়াসিন হলো সেই সুমহান রবের পবিত্র কিতাবের একাংশ। সুতরাং, সূরা ইয়াসিন বেশি বেশি তিলাওয়াত করতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। মহান আল্লাহ আমাকে এবং আমাদের সবাইকেই সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াতের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন!