ভাষাচর্চার মধ্য দিয়েই একটি সমাজ গড়ে উঠে। ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ এবং ভাষায় ব্যবহৃত সমার্থক শব্দ গুলো দ্বারা একটি ভাষার সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষায় ব্যবহৃত বাংলা সমার্থক শব্দগুলো বাংলা ভাষাকে শ্রুতিমধুর করেছে।
আমাদের মাতৃভাষা মহান রবের অফুরন্ত এক নিয়ামত। সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার-এর রক্তকণায় রঞ্জিত আমাদের মাতৃভাষা, বাংলা ভাষার প্রতিটি বর্ণ। তাই বাংলাকে নিয়ে ‘বাঙালি’ হিসেবে আমরা গর্বিত।
আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃভাষা চর্চার প্রতি বিশেষ তাকিদ করেছেন। সুতরাং, নিজের মাতৃভাষার শুদ্ধচর্চা এবং ভাষার জ্ঞান আহরণ করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের মাতৃভাষা যেহেতু বাংলা, সেহেতু বাংলা ভাষার জ্ঞান অর্জন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্যও বটে।
আমরা ধারাবাহিক ভাবে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবো। এই পর্বে থাকছে স্বরবর্ণের প্রত্যেকটি বর্ণমালার ”বাংলা প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দের দীর্ঘ তালিকা”।
”অ” বর্ণের বাংলা প্রতিশব্দ – বাংলা সমার্থক শব্দ
অখণ্ড : সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ, অবিভক্ত, আস্ত, গোটা, অভগ্ন, অক্ষত, পূর্ণাঙ্গ, অখণ্ডিত।
অনাবশ্যক : অনর্থক, নিষ্প্রয়োজন, অপ্রয়োজনীয়, অবান্তর, ফালতু, তুচ্ছ, অপ্রধান।
অনুরোধ : অনুনয়, প্রার্থনা, কাকুতি, আবেদন, আরজি, নিবেদন, মিনতি, বিনতি, ধরাধরি, সাধাসাধি, ধরা, আবদার, বায়না।
অচেতন : অসাড়, নিশ্চেতন, চৈতন্যহীন, চেতনাশূন্য, সংজ্ঞাহীন, অজ্ঞান, নিঃসাড়, বেহুঁশ, বোধশক্তিহীন, আচ্ছন্ন, মূর্ছিত, সম্মোহিত, জ্ঞানশূন্য, জ্ঞানহীন।
অকাল : অসময়, অবেলা, দুর্দিন, কুদিন, অশুভ সময়, কুক্ষণ, দুঃসময়, কুগ্রহ।
অপরিচিত : অচেনা, অজানা, অজ্ঞাত, অচিন, অনবগত, অপরিজ্ঞাত, অজ্ঞেয়।
আরও পড়ুনঃ সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য (উদাহরণ সহ)
অনেক : একাধিক, বহু, নানা, প্রচুর, অঢেল, ঢের, বিপুল, বেশি, খুব, বহুত, বহুল, বহুসংখ্যক, যথেষ্ট, ভূরি, মেলা, অজস্র, প্রভূত, অগণ্য, বিস্তার, কত, কতশত।
অপূর্ব : অদ্ভূত, আশ্চর্য, অত্যাশ্চর্য, অভূতপূর্ব, অলেীকিক, অপরূপ, অভিনব, বিস্ময়কর, আজব, তাজ্জব, চমকপ্রদ, মনোরম, সুন্দর।
অঙ্গীকার : প্রতিজ্ঞা, সংকল্প, পণ, শপথ, প্রতিশ্রুতি, অঙ্গীকরণ, জবান, হলফ।
অকস্মাৎ : আমচকা, হঠাৎ, সহসা, অতর্কিতে, অতর্কিতভাবে, আকস্মিকভাবে, অপ্রত্যাশিতভাবে, দৈবাৎ, অভাবিতরূপে, হুট করে, ঘটনাক্রমে, ঘটনাচক্রে।
অবকাশ : সময়, ফুসরত, অবসর, ছুটি, সুযোগ, বিরাম।
অজ্ঞ : মূর্খ, নির্বোধ, অশিক্ষিত, জ্ঞানহীন, বিদ্যাহীন, বেকুব, অবিজ্ঞ, মূঢ়।
অতীত : গতদিন, তৎকাল, পুরাকাল, পূর্ব, পুরা, পুরাবৃত্ত, সেকাল, পূর্বকাল, পূর্বযুগ, ভূতপূর্বকাল, আগের, পূর্ববর্তী।
অরুণ : লাল, রক্তিম, আরক্ত, সূর্যসারথি, নতুনসূর্য, প্রভাতসূর্য, প্রভাতরবি।
অনুসরণ : অনুগমন, অনুবর্তন, অনুসৃতি, পশ্চাদ্গমন, অনুসার, অনুবর্তিতা।
অতিরিক্ত : অত্যধিক, বেশি, অনেক, প্রচুর, প্রতুল, ভূরি, পর্যাপ্ত, বাড়তি, দেদার।
অক্লান্ত : ক্লান্তহীন, শ্রান্তিহীন, অশ্রান্ত, অনলস, নিরলস, অদম্য, পরিশ্রমী, উদ্যমী।
অঙ্গ : দেহ, শরীর, অবয়ব, গা, গাত্র, তনু, গতর, কাঠামো, আকৃতি, দেহাংশ।
অনুশীলন : খোঁজ, অন্বেষণ, অন্বেষ, সন্ধান, তল্লাশ, তালাশ, তদন্ত, দিশা।
অনন্ত : সীমাহীন, অন্তহীন, অপরিসীম, শাশ্বত, চিরস্থায়ী, অশেষ, অসীম, অবিনাশী।
অক্ষম : অসমর্থ, ক্ষমতাহীন, দুর্বল, অদক্ষ, শক্তিহীন, অশক্ত, হতবল, বলহীন, হীনবল, ক্ষীণবল, কমজোর, ব্যর্থ, অপারগ, অনুপযুক্ত, অসহায়, সামর্থ্যহীন।
অত্যাচার : পীড়ন, উৎপীড়ন, নিপীড়ন, নির্যাতন, নিষ্পেষণ, লাঞ্ছনা, নিগ্রহ, জুলুম।
অধ্যয়ন : শিক্ষাগ্রহণ, বিদ্যার্জন, জ্ঞানার্জন, লেখাপড়া, বিদ্যানুশীলন, পাঠ।
অক্ষয় : চিরন্তন, ক্ষয়হীন, নাশহীন, অশেষ, অনন্ত, অনিঃশেষ, অন্তহীন, অন্তবিহীন, লয়হীন, অমর, অলয়, অনশ্বর, অবিনশ্বর, চিরায়ু, চিরায়ত, স্থায়ী।
অদৃশ্য : অলক্ষিত, অদৃষ্ট, অলক্ষ্য, অগোচর, অদেখা, অদর্শিত, নাদেখা, অলখ।
অনাদর : উপেক্ষা, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য, অপমান, অবহেলা, স্নেহাভাব, নির্দয়তা।
অভাব : দারিদ্র্য, অনটন, দৈন্য, দীনতা, দুর্দশা, গরিবি, অসচ্ছলতা, ঘাটতি।
অংশু : কিরণ, জ্যোতি, প্রভা, আভা, দীপ্তি, বিভা, দ্যুতি, ভাতি।
অতুলনীয় : তুলনাহীন, অতুলন, অতুল্য, অপরূপ, চমৎকার, অনবদ্য, অনুপম, অনুপ, শ্রেষ্ঠ, দারুণ, অনন্যসাধারণ, অসাধারণ, অদ্বিতীয়, অপূর্ব, অভূতপূর্ব।
অতিথি : মেহমান, অভ্যাগত, আগন্তুক, নিমন্ত্রিত, আমন্ত্রিত, কুটুম্ব, কুটুম।
অল্প : কম, সামান্য, অপ্রচুর, নগণ্য, কিয়ৎ, যৎসামান্য, একটু, ঈষৎ, অনধিক।
অচল : গতিহীন, অটল, স্থির, অব্যবহার্য, নিথর, অপ্রচলিত।
অধীর : ব্যগ্র, উৎসুক, উন্মুখ, ব্যাকুল, ধৈর্যহীন, উচাটন।
আগুন : অগ্নি, অনল, বহ্নি, জ্বলন, কৃশানু, শিখাবৎ, শিখিন, পিঙ্গল।
অলস : কুঁড়ে/কুড়ে, নিষ্ক্রিয়, নিষ্কর্মা, অকর্মা, অকর্মণ্য, নিরুদ্যম, শ্রমবিমুখ, শ্রমকাতর।
অপচয় : অপব্যয়, বৃথাব্যয়, অপব্যবহার, হ্রাস, ক্ষয়, ক্ষতি।
অশ্রু : নয়নজল, চোখের জল, নেত্রবারি, নেত্রনীর, অশ্রুবারি।
অধিবেশন : সভা, সমিতি, সমাবেশ, জমায়েত, বৈঠক, দরবার, মজলিস, সম্মেলন, সম্মিলন, মিটিং, কনভেনশন, কনফারেন্স, সেমিনার, কর্মশিবির।
অনুজ্জ্বল : নিষ্প্রভ, অপ্রভ, নিস্তেজ, জ্যোতিঃহীন, ম্ণঢান, মিটমিটে, ম্রিয়মাণ, স্তিমিত, বিবর্ণ, টিমটিমে, ফ্যাকাশে, ক্ষীণ, মৃদু, মলিন, ফিকে, পাংশু, প্রভাহীন।
অবাধ : বাধাহীন, নির্বাধ, অপ্রতিবদ্ধ, অবারিত, অনর্গল, অবশীভূত।
অনঙ্গ : [মদন, কামভাব] কামদেব, রতিপতি, কাম, ফুলশর, মনোজ।
অত্যন্ত : অতিশয়, অতি, অতীব, অত্যধিক, অধিক, অতিমাত্র, পরম, সাতিশয়।
অনিবার্য : অবশ্যম্ভাবী, অবধারিত, অব্যর্থ, অমোঘ, দুর্নিবার, অলঙ্ঘনীয়।
অন্তর : ফাঁক, মধ্য, ছিদ্র, ব্যবধান, তফাত, ভেদ; মন, হৃদয়।
অবস্থা : দশা, রকম, প্রকার, হালচাল, হালত, হাবভাব, ভাবভঙ্গি, ভাবগতি।
অখ্যাতি : অপযশ, নিন্দা, কুৎসা, দুর্নাম, অযশ, অপ্রসিদ্ধ, অগেীরব, অসম্মান।
অদ্ভূত : উদ্ভট, আজগুবি, বিচিত্র, বিস্ময়কর, আশ্চর্যজনক, অভিনব, অপূর্ব, তাজ্জব।
অনুকরণ : অনুসরণ, নকল, সদৃশীকরণ, সাদৃশ্যকরণ, প্রতিকরণ, প্রতিরূপীকরণ।
অন্ধকার : আঁধার, আঁধারি, তিমির, আলোকহীনতা, আলোকশূন্য।
”আ” বর্ণের বাংলা প্রতিশব্দ – বাংলা সমার্থক শব্দ
আল্লাহ : খোদা, বিধাতা, স্রষ্টা, সৃষ্টিকর্তা, ইলাহ, প্রভু, পরমাত্মা।
আদেশ : নির্দেশ, হুকুম, ফরমায়েশ, বিজ্ঞপ্তি, আজ্ঞা, অনুমতি, অনুজ্ঞা, বিধান।
আসল : খাঁটি, মূলধন, মেীলিক, মূল, প্রকৃত, যথার্থ।
আদালত : বিচারালয়, কোর্ট, বিচারশালা, বিচারস্থান, কাছারি, এজলাস।
আপ্যায়ন : সমাদর, আদরযত্ন, যত্ন-আত্তি, খাতির, আদর, সেবাযত্ন, আতিথেয়তা।
আকুল : ব্যাকুল, কাতর, ব্যগ্র, উৎসুক, অধীর, উদ্বিগ্ন, আবিষ্ট, কেীতূহলী, অস্থির।
আবেদন : নিবেদন, আরজি, অনুরোধ, দরখাস্ত, চাওয়া, যাচ্ঞা, প্রার্থনা, মাগন।
আধুনিক : সাম্প্রতিক, নব্য, নবীন, বর্তমান, অধুনা, সমকালীন, হালের, অধুনাতন।
আহ্বায়ক : আহ্বানকারী, আমন্ত্রণকারী, নিমন্ত্রণকারী, সম্বোধক, আবাহক।
আফসোস : পরিতাপ, দুঃখ, খেদ, অনুতাপ, অনুশোচনা, আক্ষেপ, শনস্তাপ।
আইন : বিধান, কানুন, বিধি, নিয়ম, নিয়মকানুন, বিহিতক, অনুবিধি, ধারা।
আচমকা : হঠাৎ, চকিতে, সহসা, অকস্মাৎ, অতর্কিতে, আচম্বিতে।
আশ্চর্য : বিস্ময়, চমক, অবাক, অদ্ভুত, বিস্ময়কর, বিস্মিত।
আকার : আকৃতি, চেহারা, ঢং, আদল, গড়ন, গঠন, সেীষ্ঠব, রূপ, কায়া, অবয়ব।
আরম্ভ : শুরু, সূচনা, সুত্রপাত, প্রারম্ভ, উপক্রমণিকা, অবতারণা, আরম্ভণ।
আনন্দ : হর্ষ, হরষ, পুলক, আহ্লাদ, সুখ, ফুর্তি, স্ফূর্তি, উৎফুল্লতা, প্রসন্নতা।
আমন্ত্রণ : নিমন্ত্রণ, আহ্বান, নেমন্তন্ন, সম্ভাষণ, ডাক, আহূতি, আহাবান।
আকাশ : গগন, অন্তরিক্ষ, আসমান, নীলিমা, নভোমন্ডল, নভস্থল, অম্বরতল।
আদি : প্রথম, আরম্ভ, অগ্র, প্রাচীন, উৎস, মূল।
আলো : কিরণ, দীপ্তি, প্রদীপ্তি, জেীলুস, চাকচক্য, রওশন, নুর, ঔজ্জ্বল্য, অংশু।
আবর্তন : প্ররিভ্রমণ, প্রত্যাবর্তন, পুনরাগমন, বেষ্টন, আলোড়ন, ঘোরা, প্রদক্ষিণ।
”ই” বর্ণের বাংলা প্রতিশব্দ – বাংলা সমার্থক শব্দ
ইচ্ছা : অভিলাষ, বাঞ্ছা, অভিপ্রায়, স্পৃহা, সাধ, বাসনা, আকাঙ্কা, কামনা, অভিরুচি, প্রবৃত্তি, মনোরথ, ঈপ্সা, অভীপ্সা, আশা, এষণা, মনোবাসনা, মনোবাঞ্ছা।
ইদানীং : সম্প্রতি, আজকাল, অধুনা, হালে, ইদানীন্তন, এইসময়, হালফিল।
ইতি : শেষ, অবসান, খতম, সমাপ্তি, যবনিকাাপাত, সমাপন, ছেদ, সাঙ্গ।
ইন্দ্র : অধিপতি, সুরপতি, দেবপতি।
”ঈ” বর্ণের বাংলা প্রতিশব্দ – বাংলা সমার্থক শব্দ
ঈর্ষা : দ্বেষ, বিদ্বেষ, হিংসা, রেষারেষি, বৈরিতা, পরশ্রীকাতরতা, অন্তর্দাহ।
ঈক্ষা : দৃষ্টি, দেখা, তাকানো, ইঙ্গিত, অবলোকন, ঈক্ষণ, দর্শন, দৃষ্টিপাত।
ঈশ্বর : আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, স্রষ্টা, পরমাত্মা, করুণাময়, দয়াময়।
পরবর্তী আর্টিকেলে থাকছে ”উ – ঔ” পর্যন্ত। [ স্বরবর্ণ শেষ করা হবে ইনশাআল্লাহ।]
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ
প্রিয় পাঠক, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই ভাষার ব্যবহার অপরিহার্য। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এবং রাস্ট্রীয় ভাষা। এই ভাষায় বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০ কোটিও বেশী মানুষ কথা বলে।
বাংলা ভাষাভাষীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়াতে বসবাস করে এবং বাংলা ভাষা পৃথিবীর ৪র্থ বৃহত্তম ভাষা হিসেবে মনোনীত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, আমাদের বাংলা ভাষার সুনাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে। কারণ, ইতিহাসে ভাষার জন্য কেউ যুদ্ধ করেনি। তাই বাংলা আমাদের গর্বের ভাষা।
যাইহোক, বাংলা ভাষাকে মধুরতার সাথে যথাযথা ভাবে ব্যবহার করার জন্য বাংলা প্রতিশব্দ বা বাংলা সমার্থক শব্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এগুলো শিখতে পারেন তবে ভাষার জ্ঞানে আপনি সমৃদ্ধ হতে পারবেন।
আমরা নিয়মিত বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন আলোচনা এই ওয়েবসাইটে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। আপনাদের কোন প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ