ইসলামের ইতিহাস পাঠের এই পর্বে আপনাকে স্বাগতম। আজ আমরা খোলাফায়ে রাশেদীন এর পরিচয় ও তাদের শাসনকাল সম্পর্কে জানবো। ইসলামিক ইতিহাসের সেরা ৪ নক্ষত্রের ধারাবাহিক জীবনী পর্ব আজ থেকেই শুরু করা হলো। আল্লাহ চাহেত বেশ কয়েকটি পর্বের মাধ্যমে খোলাফায়ে রাশেদাগণের জীবনী থেকে বিভিন্ন বিষয় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ এবং মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে সম্মানি মানুষ হলেন নবী-রাসূলগণ। অতি উত্তম চরিত্রের অধিকারী কেবল তাঁরাই। যারা স্বশরীরে নবী-রাসূলগণের অনুসরণকারী হয়েছিলেন, তাঁদেরকে সাহাবী বলা হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অগণিত সাহাবী ছিল। তাদের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদাগণের মর্যাদা সবচেয়ে বেশী।
খোলাফায়ে রাশেদীন কাকে বলে?
প্রিয় নবী (স.) এর অবর্তমানে সাহাবায়ে কেরাম বাযি. এর মধ্যে প্রথম চারজন সাহাবী যারা খেলাফতের দায়িত্বে ছিলেন এবং মুসলিম উম্মাকে শাসন করেছেন, তাদেরকে খোলাফায়ে রাশেদীন বলা হয়। সকল সাহাদীদের মধ্যে আমরা খোলাফায়ে রাশেদাগণকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করি।
(১) হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাযি.)
(২) হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাযি.)
(৩) হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাযি.)
(৪) হযরত আলি ইবনে আবী তালেব (রাযি.)
খোলাফায়ে রাশেদীনগণের খেলাফতের বিন্যাস তাদের মর্যাদা অনুযায়ী হয়েছে। অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর সর্বপ্রথম খলিফা হযরত আবু রকর ছিদ্দীক রাযি.। দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাযি.। তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রাযি.। চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রাযি.। এই চারজন খলিফার খেলাফত সত্য হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত উম্মত একমত।
খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনকাল
(১) হযরত আবু বকর রাযি. -এর খেলাফতের সময়কাল (৬৩২-৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) দুই বছর তিন মাস।
(২) হযরত ওমর ফারুক রাযি. -এর খেলাফতের সময়কাল (৬৩৪-৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) সাড়ে দশ বছর।
(৩) হযরত ওসমান রাযি. -এর খেলাফতের সময়কাল (৬৪৪-৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দ) বার বছর।
(৪) হযরত আলি রাযি. -এর খেলাফতের সময়কাল ৬৫৬-৬৬১ খ্রিষ্টাব্দ) চার বছর নয় মাস।
(এরপর হযরত হাসান বিন আলি রাযি. এর খেলাফতের সময়কাল ছয়মাস। তারপর হযরত মু’আবিয়া রাযি. এর সাথে হাসান বিন আলি রাযি. আপস করে নেন।
আরো পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ।
এর পর থেকে গভর্নর ও রাজত্বের যুগ শুরু হয়ে যায়। এ হিসেবে হযরত মু’আবিয়া রাযি. মুসলমানদের সর্বপ্রথম বাদশাহ এবং সকল মুসলিম বাদশাহগণের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট।
খোলাফায়ে রাশেদীনের মর্যাদা
সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ। অতঃপর খোলাফায়ে রাশেদার যুগ। এরপর তার পরের যুগ। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ خير القرون قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم.
আবার খোলাফায়ে রাশেদীন এর মধ্যে হযরত আবু রকর রাযি., অতঃপর হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাযি., অতঃপর হযরত উসমান রাযি., অতঃপর হযরত আলী রাযি.পর্যায়ক্রমে মর্যাদাশীল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ চারজন খোলাফায়ে রাশেদীন জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত। সুতরাং তাঁর কথায় আমরা তাঁদের ব্যাপারে জান্নাতী হওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছি।
মোটকথাঃ
যারা খোলাফায়ে রাশেদীন সহ সকল সাহাবাদেরকে মহব্বত করবে, তারা নিশ্চয় তাঁদের সুআলোচনা করবে। আর তারাই নেফাক থেকে মুক্ত থাকবে। কিন্তু যারা তাদের সাথে বিদ্বেষ এবং শত্রুতা পোষণ করে, তাদেরকে গালমন্দ এবং সমালোচনার টার্গেট বানায়, প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের ঈমানের সাথে শত্রুতা পোষণ করে।
পর্যায়ক্রমে আমরা ইসলামের ইতিহাস আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। ধারাবহিক ভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় সাহাবীগণ, খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবনী এবং তাদের কৃতিত্ব সম্পর্কে আর্টিকেল পাবলিশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।