২০২৬ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) কর্তৃক একটি সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি প্রকাশিত হয়েছে। এই পরিবর্তন মূলত নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করার মূল লক্ষ্য হলো কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ মূল বিষয়বস্তুর উপর মনোযোগ নিশ্চিত করা। তবে, যারা অনিয়মিত বা মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী হিসেবে ২০২৬ সালে অংশগ্রহণ করবে, তাদের জন্য ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসটিই অনুসরণ করতে হবে।
২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাস
২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে প্রশ্নের ধরণ এবং নম্বর বণ্টনে। পূর্বে প্রচলিত কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা প্রতিটি বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য।
১. তত্ত্বীয় ও বহুনির্বাচনি অংশ (১০০ নম্বরের বিষয়)
১০০ নম্বরের তত্ত্বীয় বিষয়গুলোতে মোট নম্বর তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে:
(ক) সৃজনশীল প্রশ্ন (Creative Questions – CQ): এটি এখন ৫০ নম্বরের জন্য বরাদ্দ। শিক্ষার্থীদের ৮টি সৃজনশীল প্রশ্নের মধ্যে যেকোনো ৫টির উত্তর দিতে হবে (প্রতিটি ১০ নম্বর)।
(খ) সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন (Short-Answer Questions – SAQ): এই অংশটি নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং এখানে ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। সাধারণত ১৫টি প্রশ্নের মধ্যে ১০টির উত্তর দিতে হবে (প্রতিটি ২ নম্বর)। এই অংশটি মূলত জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন নিয়ে গঠিত হবে।
(গ) বহুনির্বাচনি প্রশ্ন (Multiple Choice Questions – MCQ): ৩০ নম্বর অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে (প্রতিটি ১ নম্বর)।
২. ব্যবহারিক অংশ সহ বিষয় (৭৫+২৫ নম্বর)
পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং অন্যান্য ব্যবহারিক বিষয়গুলোতে নম্বর বণ্টন নিম্নরূপ:
(ক) তত্ত্বীয় অংশ: এই অংশে ৭৫ নম্বর বরাদ্দ থাকবে, যা সৃজনশীল প্রশ্ন (৫০ নম্বর) ও সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন (২৫ নম্বর) এর সমন্বয়ে গঠিত হবে।
(খ) ব্যবহারিক অংশ: ২৫ নম্বর বরাদ্দ থাকবে।
Note: এই নতুন নম্বর বণ্টনের কাঠামো (৫০+২০+৩০) বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার সকল তত্ত্বীয় বিষয়ের জন্যই প্রযোজ্য হবে। তবে গণিতের ক্ষেত্রে সৃজনশীল অংশ (৫০) এবং সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন (২০) ও বহুনির্বাচনি (৩০) এর বিভাজনটি বিষয়ের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
বিষয়ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
যদিও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে প্রতিটি বিষয়ের অধ্যায় ও পরিচ্ছেদ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তবুও সাধারণ কিছু বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনা অনুসরণ করা জরুরি:
(i) বাংলা ও ইংরেজি: বাংলা প্রথম পত্রে গদ্য, কবিতা ও সহপাঠ থেকে নির্দিষ্ট অংশগুলো এবং ইংরেজি প্রথম পত্রে Unseen Passage সহ নির্ধারিত Unit গুলো গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে।
(ii) গণিত: বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি এবং পরিমিতির নির্বাচিত অধ্যায়গুলোর উপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে বীজগণিতের ২য়, ৩য় ও ১১শ অধ্যায় এবং জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতির অধ্যায়গুলো পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
(iii) বিজ্ঞান শাখা: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে অধ্যায়ের গভীর জ্ঞান এবং সেই সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যার সমাধানে মনোযোগী হতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাস ২০২৬ এর সম্পূর্ণ অফিসিয়াল PDF সংগ্রহ করা এবং পরীক্ষার নতুন কাঠামো সম্পর্কে শিক্ষকদের মাধ্যমে স্পষ্ট ধারণা নেওয়া। এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসটি শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকরী হবে। এটিকে কাজে লাগিয়ে কৌশলগতভাবে প্রস্তুতি নিলে শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল নিশ্চিত হবে বলে মনে করি।