শোনো, তোমাকেই বলছি

শোনো, তোমাকেই বলছি
Written by IQRA Bari

শোনো, তোমাকেই বলছি

তুমি নিজেকে যেভাবে প্রকাশ করবে ঠিক সেভাবেই কিন্তু মানুষ তোমাকে চিনবে। সেটা হোক বিড়ালের মতো মিউ মিউ কিংবা সিংহের মতো গর্জন। কথা বলার সময় ভেবে চিন্তে কথা বলো। কি বলছো, মুখে যে কথাগুলো উচ্চারণ হচ্ছে আসলেই কি এগুলো চিন্তার সাথে প্রাসঙ্গিক?

তুমি হয়তো নিশ্চয়ই জানো ধনুকের তীর যেমন ছুঁড়ে দিলে ফেরানো যায় না, ঠিক তেমনই বলে ফেলা কথাও ফেরানো যায় না। তোমার ভাবমূর্তি হতে হবে তোমার মতো, কাউকে অনুকরণ করে নয়, সেটা তোমার সাথে নাও মিলতে পারে, তবে অনুসরণ করা দোষের কিছু না। শোনো তোমার মাঝে কি আছে সেটা খুঁজে বের করো। আসলে তোমার মন কি চায়, সেটা তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে।

তুমি যদি খুব চঞ্চল মনের মানুষ হও, তবে এভাবেই নিজেকে প্রকাশ করো। আর যদি নীরবতা তোমার কাছে ভালো লাগে, তবে চঞ্চল হতে যেওনা। ব্যতিক্রম হলেই মানুষ তোমাকে বেকুব অথবা ফালতু মনে করবে। হয়তো তখন অবহেলায় ভেসে যাবে।

শোনো, সব জায়গায় সব কথা বলা যায় না ৷ কখনো কখনো কিছু কথা ঠোঁটের ডগায় চলে আসে, ঠেলে বের হতে চাইবে কিছু কঠোর বাক্য, আর তুমি তা যদি আটকে না রেখে ছুরে দাও,
তবে হয়তো ভেঙে যেতে পারে খুব নিগূঢ় কাছের সম্পর্কও ৷ আর যদি আটকে রেখে কণ্ঠে দাও ধৈর্যের বাঁধ, তবে দেখবে একসময় তোমার মনে হবে সেই সময় কথা গুলো না বলেই ভালো করেছিলে ৷ কারণ, সময় অনেক কিছুই পাল্টে দেয় ৷

শোনো, পৃথিবীর কোন কিছুই কিন্তু স্থায়ী নয়, এটা তোমাকে মনে রাখতে হবে। তবে কখনো কখনো কিছু জায়গায় কথা না বললেই নয়, বলতে তোমাকে হবেই। তোমার সৎ সাহস দেখে যেনো হাজারো মানুষের নীরব ঘুম ভেঙে যায়। তারাও যেনো স্বপ্ন দেখে একটি নতুন পৃথিবীর। প্রতিবাদের শুরুটা কিন্তু এক জনকে দিয়েই হয় ৷ আর শেষটা হয় একটা জাতি নিয়ে ৷

শোনো, তোমাকে সেই মানুষটাই হতে হবে, যে মানুষটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাত মুঠো করতে একটুও দ্বিধা করে না ৷ ঝাপিয়ে পরে সিংহের মতো। যার মনের অভিধান থেকে ভয় নামক শব্দটা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে ৷ যে শুধু ভয় পাবে মহান প্রভু আল্লাহকে ৷ পৃথীবির সব পরাশক্তি তার কাছে তুচ্ছ মনে হবে ৷

তুমি একটি সূর্য হও। তবে কথা দিচ্ছি বিজয়ের সন্ধান তুমি পাবেই। তোমার আলোয় আলোকিত হবে সারা ভুবন। সে জন্য তোমাকে সাধনা করতে হবে। শিক্ষায় আলোয় সেভাবেই তৈরী হতে হবে ৷ মানুষ যার তার পিছে দাঁড়ায় না ৷ তুমি নিজেকে শিক্ষায় আলোয় এমন মজবুত করে তুলো যেন সিংহভাগ ব্যক্তিও তোমার পিছনে দাঁড়াতে গর্ভবোধ করে ৷ মানুষকে কখনোই কিনতে যাবে না, মানুষ হাজার বার বিক্রি হলেও মন থেকে যাকে চায় সে পুনরায় তার দিকেই ফিরে আসে ৷ তুমি তাদের জয় করতে শিখো।

কখনো কখনো খুব কাছের বন্ধুকেও কিন্তু শত্রুর মতো মনে হবে,
কিছু কাজ কিংবা কথায় রাগ চরম পর্যায়ে চলে যাবে।
তুমি সে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখো,
দেখবে সামান্য সময়ের ব্যবধানে বন্ধুত্ব ঠিক আগের মতোই মজবুত আছে৷
আর যদি তুমি রাগ প্রকাশ করেই ফেলো তবে বন্ধুত্বের মাঝে বিশাল ফাটল ধরবে সময়ের ব্যবধানে হয়তো সেটাও কমে যাবে, তবে হৃদয়ে একটা ক্ষোভ নামক দাগ তো থেকেই যাবে, যা তোমার বিপদে বেড়িয়ে আসতে পারে ভয়ংকর রূপে৷

আর শোনো, কে কি বললো তাতে তোমার আসে যায় না,
তুমি কি করলে? তোমার বিবেক তোমাকে কি বলে?
সেদিকে তাকাও।
মনে রেখো, পৃথিবীতে তোমার ভালো হোক সেটা খুব কম মানুষ চাইবে।
তবে তোমাকে চিনে নিতে হবে কারা আসলেই তোমার ভালো চায়। কারা তোমাকে মুখে মুখে সম্মান আর ভালোবাসা দেখায় আর কারা তোমাকে মন থেকে সম্মান ও ভালোবাসে।

শোনো, মানুষের বাহিরের রং দেখে ভেতরটা চেনা খুব কঠিন। এই কঠিন কাজের দক্ষতা তোমাকে অর্জন করতে হবে ৷ এর জন্য প্রয়োজন তোমার সরলতা, সততা, বিশ্বাস, আর গভীর ধ্যান।
চালাকি করে কখনোই মানুষ চিনতে পারবে না, মানুষকে চিনতে হলে তার ভেতরে ঢুকা লাগবে। বিশ্বাস করতে হবে মনে প্রাণে, তারপর যারা তোমাকে ঠাকবে তাদের কে চিনে নিও। এক এক করে চিনার প্রয়োজন হয়না। তুমি শুধু মানুষের রূপ গুলো আলাদা আলাদা ভাবে বুঝে নাও, দেখবে সব কিছুই তোমার কাছে সহজ হয়ে গেছে৷

তুমি ঠকার জন্য এই পৃথিবীতে আসোনি,
তোমাকে সব সময় অতীত মনে রাখতে হবে। কেননা অতীত মানুষকে অনেক শিক্ষা দেয়। যদি অতীতের সাথে ভবিষ্যৎ -এর কোনো মিল না থাকতো তবে হয়তো প্রতি বছর আসমানি কিতাব নাজিল হতো৷
অতীত আর ভবিষ্যৎ এর সম্পর্ক গভীর।

শোনো, তোমাকে অতীত সব সময় মাথায় রেখে চলতে হবে। কি ঘঠেছিল! এখন কি ঘটছে সামনে কি ঘটতে চলেছে এগুলো তোমাকে ভাবতে হবে।
তুমি যদি মনে করো এতো ভেবে কি লাভ? যেমন আছি ভালোই আছি। তবে এখানে মানবতার পরিচয় ঢেকে রাখা হলো কেবল । মানুষ আর অন্যান্য প্রাণীর মাঝে ব্যবধান কি জানো? ওরা কোন কাজ করার আগে ভাবে না। তাদের কাছে ভালো মন্দ উভয়ই সমান। কিন্তু একজন মানুষ তার ব্রেনকে কাজে লাগিয়ে ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারে। এজন্যই মানুষ শ্রেষ্ঠজাতি। মানুষের চিন্তা মানুষকে অনেক উঁচু করে তুলে। তাই নিজেকে আগে চিনো। নিজেকে জানো।

লেখকঃ মো. মাইন উদ্দিন মাহিন।
প্রবাসী: সৌদি আরব

Leave a Comment

error: Content is protected !!