নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
Written by IQRA Bari

ন্যাশানাল আইডি কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। এই ডকুমেন্টটি ছাড়া নাগরিক সুবিধা পাওয়া দুস্কর ব্যাপার। তাই নাগরিকদের প্রায় সকলেই জানতে চায় নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম কি এবং আইডি কার্ড করতে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নাগরিকদের যেই পরিচয়পত্র সনদ প্রদান করে তাকেই মূলত জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড কিংবা এনআইডি কার্ড (NID CARD) বলা হয়।

জীবন চলার পথে প্রত্যেক নাগরিকের জন্যই এনআইডি কার্ড অপরিহার্য ডকুমেন্ট। এটি ছাড়া ক্যরিয়ার লাইফে কিছুই করা সম্ভব না।

যাইহোক, আপনি যদি নতুন ভোটার রেজিস্ট্রেশন করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে কিভাবে কি করতে হবে তার পুরো প্রসেসটা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

সাধারণত প্রতি তিন বছর পর পর আদম শুমারীর মাধ্যমে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়।

তখন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর পক্ষ থেকে সারা দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের লোকজন নতুন ভোটার নিবন্ধন তালিকা হালনাগাদ করে।

এবছরেও (২০২২) এটি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রতি বছরের জানুয়ারী মাসের শেষে নতুন ভোটারদের তালিকা প্রকাশ করে।

আরো পড়ুনঃ নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করতে হয় যেভাবে

যারা কোনো কারণে ভোটার হতে পারেননি, তারা চাইলে অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

তাছাড়া, নিকটস্ত নির্বাচন অফিসে গিয়েও নতুন ভোটারের জন্য আবেদন  করতে পারবেন।

যাদের ৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, তারা সকলকেই জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করা জরুরি। কেননা, সরকারি -বেসরকারি প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এর প্রয়োজন হয়।

নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে?

বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করতে পারবে। এটা নাগরিকদের অধিকার।

তবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার আইডি কার্ড করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-নীতি তৈরি করে রেখেছে।

তাদের নীতিমালা ফলো করেই আপনার জন্য একটি ন্যাশানাল ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করতে পারবেন। চলুন জেনে নিই এন আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে।

▷ ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি (বাধ্যতামূলক)।

▷ পিতা -মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম সনদের ফটোকপি (বাধ্যতামূলক)।

▷ চেয়ারম্যান /পৌর মেয়র/ ওয়ার্ড কাউন্সিলর/ওয়ার্ড মেম্বর কর্তৃক সাক্ষরিত প্রত্যায়ন পত্র (বাধ্যতামূলক)।

▷ শিক্ষিত হলে সর্বশেষ সার্টিফিকেট সনদের ফটোকপি জমা দিতে হবে। শিক্ষিত না হলে এর প্রয়োজন নেই।

▷ রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট। (নতুন আইডি কার্ডের আবেদনের জন্য বাধ্যতামূলক নয়, তবে স্মাটকার্ড নেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক)।

▷ চৌকিদারী টেক্স রশিদ বা পৌর করের রশিদের ফটোকপি (বাধ্যতামূলক)। বাড়ির যে কোনো সদস্যের নামে হলেই হবে।

▷ বিবাহিত হলে স্মামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র / জন্ম সনদের ফটোকপি/ কবিননামা বা বৈবাহিক সনদ। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

▷  বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/পানি বিলের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। বাড়ির যে কোনো সদস্যের নামে হলেই হবে।

▷  পূর্বে ভোটার হয়নি এই মর্মে অঙ্গীকারনামা। যাদের অনেক বেশী বয়স হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

▷ পাসপোর্ট এর ফটোকপি (যদি থাকে)।

▷ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটোকপি (যদি থাকে)।

উপরোল্লিখিত কাগজপত্র গুলো থাকলেই আপনি ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার জন্যে বাস্তবে সবগুলো কাগজ জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে আপনার কাছে যদি এই কাগজপত্র গুলো রেডি থাকে, তবে অবশ্যই জমা দেওয়া উচিত।

এনআইডি কার্ড করতে কোথায় যেতে হয়?

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার আইডি কার্ডের হালনাগাদ কার্যক্রম কিছুদিন আগেও চলমান ছিল। সারা বাংলাদেশেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার লিস্ট করা হয়েছে।

আপনি যদি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় কোনো ভাবে বাদ পড়ে থাকেন, তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

যে কোনো সময় আপনার নিকটস্ত নির্বাচন অফিসে গিয়ে NID কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আবেদন করার প্রক্রিয়াটা হলো উপরোল্লিখিত কাগজপত্র গুলো আপনাকে রেডি করতে হবে। তারপর আপনার জেলা/উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে।

অতঃপর তারা আপনাকে একটি ভোটার আইডি কার্ড ফরম দেবে। যেই ফরমটি আপনাকে পূরণ করতে হবে।

ফরমটি পূরণ হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো জমা দিতে হবে এবং তারাই আপনাকে বলে দেবে ছবি তোলা এবং ফিংগার প্রিন্ট এর কার্যক্রম কখন শুরু হবে।

অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

ডিজিটাল পদ্ধতিতে আপনি নিজ ঘরে বসেই অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এজন্য আপনাকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট https://www.services.nidw.gov.bd/ -এ প্রবেশ করতে হবে।

ভোটার আইডি কার্ড তৈরি

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর উপরের ছবিব মতো একটি ওয়েবসাইট ওপেন হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রথমেই আপনাকে একটি একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে।

একাউন্টটি তৈরি করার জন্যে “নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন” এই ঘরটি থেকে “আবেদন করুন” বাটনে ক্লিক করুন।

তাহলে “অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন” নামের নতুন একটি পেজ ওপেন হবে।

nid ভোটার আইডি কার্ড তৈরি

এই পেজে আসার পর আপনার নাম ও জন্ম তারিখ টাইপ করতে হবে। অবশ্যই ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা লাগবে।

নাম ও জন্ম তারিখ টাইপ করার পর নিচে একটি ক্যাপচা থাকবে। যেখানে কিছু ইংরেজি বর্ণ ও গাণিতিক সংখ্যা দেওয়া থাকবে।

ক্যাপচায় উল্লেখ করা বর্ণ বা সংখ্যাগুলো সঠিক ভাবে নিচের খালি ঘরে আপনাকে টাইপ করতে হবে।

ক্যাপচা বুঝতে অসুবিধা হলে ক্যাপচার সারসরি ডানপাশে ডিসেট বাটন রয়েছে, যেখানে ক্লিক করলে ক্যাপচা কোড পরিবর্তন হবে।

যাইহোক, ক্যাপচা পূরণ করার পর “বহাল” বাটনে ক্লিক করুন।

ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন

তারপর আপনার সামনে নতুন আরেকটি পেজ ওপেন হবে। এখানে আপনার মোবাইল নম্বরটি দিতে হবে।

এমন মোবাইল নম্বর দিতে হবে যেটা এক্টিভ রয়েছে। কারণ, মোবাইল নম্বরে একটি সিকিউরিটি কোড পাঠানো হবে, যেটা দিয়ে নম্বর ভেরিফাই করা হবে।

মোবাইল নম্বরটি টাইপ করার পর “বার্তা পাঠান” এই বাটনে ক্লিক করুন।

উল্লেখ্য, মোবাইল নম্বর আপনার পরিবারের যে কারো হলেই হবে। এতে কোনো সমস্যা নেই।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড

আপনি যেই মোবাইল নম্বরটি দিয়েছেন, সেই নম্বরে ৬ ডিজিটের গাণিতিক কোড পাঠানো হবে।

আপনার মোবাইলের মেসেজ থেকে ৬ ডিজিটের গাণিতিক কোডটি সংগ্রহ করে উক্ত পেজের খালি ঘরে বসিয়ে দিন।

প্রথমবার “বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করার পর যদি কোডটি আপনার নম্বরে না আসে, তবে “পুনরায় পাঠান” বাটনে ক্লিক করুন।

কোডটি পাওয়ার পর “বহাল” বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী স্টেপে যান।

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড

তারপর আপনার অ্যাকাউন্টটি সুরক্ষিত করতে ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে।

ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ইউনিক ইউজারনেম দিতে হবে।

ইউজারনেম আপনার আইডি কার্ডের নামে নামে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, এটি আপনার ফিজিক্যাল আইডি কার্ডের ইনফরমেশনে যুক্ত হবে না।

এটি কেবল অনলাইন সিকিউরিটি পারপাসে সেট করা হয়। তাই ইউজারনেম এর স্থানে যে কোনো নাম ব্যবহার করা যাবে।

তারপর একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ডে ইংরেজি বর্ণ, গাণিতিক সংখ্যা এবং যে কোনো সিম্বল ব্যবহার করতে পারেন।

ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড সেট করার পর “বহাল” বাটনে ক্লিক করুন।

ভোটার আইডি কার্ড জাতীয় পরিচয় পত্র

তারপর উপরের ছবির মতো একটি নতুন পেজ ওপেন হবে।

এই পেজের হেডার মেনুতে আপনার একাউন্টের ইউজারনেম দেখতে পাবেন এবং একাউন্ট থেকে লগআউট করারও বাটন পারেন।

এইপেজে আমাদের কোনো কাজ নেই।

আপনি সরাসরি “প্রোফাইল বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে চলে যান।

ভোটার আইডি কার্ড ফরম

প্রোফাইল বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সামনে একটি ফরম চলে আসবে।

এই ফরমটি যথাপোযুক্ত তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে।

ফরমটি পূরণ করার সময় অবশ্যই জন্ম নিবন্ধনটি কাছে রাখবেন এবং জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যের সাথে মিল রেখেই ফরমটি পূরণ করবেন।

সঠিক তথ্য দিয়ে ফরমটি পূরণ করার পর পরবর্তী পেজে চলে যান।

উল্লেখ্য, আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদে যদি কোনো প্রকার ভুল থাকে, তবে ভোটার আইডি কার্ড করার আগেই জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে নিন।

জাতীয় পরিচয়পত্র করার নিয়মাবলী

ফরম পূরণ করে “পরবর্তী বাটনে” ক্লিক করার পর আপনার সামনে উপরের ছবিব মতো একটি পেজ ওপেন হবে।

ফরম পূরণ করতে গিয়ে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তবে “পেছনে” বাটনে ক্লিক করুন।

আর ফরম যদি নতুন করে পুণরায় পূরণ করতে চান, তবে “বাতিল” বাটনে ক্লিক করবেন।

যাইহোক, পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর সর্বশেষ “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করে আপনার আবেদনটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিন।

নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র করার নিয়ম

আবেদনটি সাবমিট করার পর উপরের ছবির মতো একটি পেজ ওপেন হবে।

পেজের নিচের অংশে সবুজ কালারে একটি লেখা দেখতে পারেন। যেখানে লেখা থাকবে “ আপনার একটি অ্যাপ্লিকেশন পেন্ডিং রয়েছে”।

তার একটু উপরেই “ডাউনলোড” নামের একটি বাটন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করে জাতীয় পরিচয় পত্র ফরম ডাউনলোড করে নিন।

তারপর ফরমটিকে প্রিন্ট করতে হবে। প্রিন্ট করার পর আপনি নিশ্চিত হন যে, আপনার ফরমে কোনো ভুল তথ্য নেই।

অতঃপর আপনার উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র করতে কি কি লাগে তা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই নতুন করে পুণরায় বলার প্রয়োজনবোধ করছি না।

নির্বাচন অফিসে কাগজপত্র গুলো জমা দেওয়ার পর আপনাকে তারা একটি ডেট বলে দেবে ছবি তোলা এবং ফিংগার প্রিন্ট নেওয়ার জন্যে।

সেই তারিখে যোগাযোগ করলেই আপনার আইডি কার্ডের পুরো প্রসেস কমপ্লিট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ

প্রিয় পাঠক, অফলাইন ও অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়মবালী আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা চেষ্টা করেছি। নতুন ভোটার নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে মূলত উপরোল্লিখিত ধাপ গুলোই অনুসরণ করতে হয়।

আশা করছি আপনার ভোটার তথ্য হালনাগাদ করতে আর্টিকেলটি আপনার খুবই হেল্পফুল হয়েছে। এই বিষয়ে যদি আপনার আরও কোনো প্রশ্ন থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করুন। সবাইকে ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!