নামাজ কি? নামাজ পড়ার নিয়ম

নামাজ কি - নামাজ পড়ার নিয়ম
Written by IQRA Bari

নামাজ পড়ার নিয়ম: ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী অর্থাৎ মুসলমান হওয়ার পরই সর্বপ্রথম নামাজের হুকুম অর্পন করা হয়েছে। সকল নবী-রাসূলের শরী’আতেই নামাজের বিধান কার্যকর ছিল। পদ্ধতিগত ভাবে সামান্য পার্থক্য থাকলেও হযরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলের অনুসারীদের ওপর নামাজ ফরজ করা হয়েছে।

কিন্তু আমাদের প্রিয় ভাই-বোনদের মাঝে অনেকেই আছেন, সঠিক ভাবে নামাজ পড়ার নিয়ম জানেন না। তাদের জন্যই পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনি যদি এই ব্লগটি পড়েন তবে নামাজ কিভাবে পড়তে হয় এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন ইনশাআল্লাহ। নামাজের দোয়া সমূহ শিখে নিন।

নামাজ কি?

নামাজ হলো ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা প্রায় ৮২ বার নামাজের কথা উল্লেখ করেছেন। মানুষকে নামাজের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ –তোমরা নামাজ আদায় করো।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজের হিসেব নেওয়া হবে।

নামাজ হলো মহান আল্লাহ তা’আলার একটি বিশেষ হুকুম। ইসলামের শুরুতে মুহাম্মাদ স. এর উম্মতের ওপর মাত্র দুই ওয়াক্ত নামাজ ফরজ ছিল। (১) সূর্য উঠার আগে (২) সূর্য ডোবার পরে। হিজরতের দেড় বছর পূর্বে রাসূলুল্লাহ স. যখন মে’রাজে গমন করেন, তখন মহান আল্লাহর পক্ষ হতে ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা, এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উম্মতের জন্য উপঢৌকন হিসেবে নিয়ে আসেন।

এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুধু এই উম্মতেরই বৈশিষ্ট্য। পূর্বের কোনো উম্মতের জন্য একত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ ছিল না। কোনো নবীর উম্মতের জন্য যোহর, আবার কোনো নবীর উম্মতের জন্য আসর আবার কোনো নবীর উম্মতের জন্য শুধু ফজরের নামাজ ফরজ ছিল। (ইলমুল ফিকাহ: ২/১)

সালাত শব্দের অর্থ কি?

নামাজ (نماز) শব্দটি ফর্সি ভাষা হতে এসেছে। মোগল আমলে তা বাংলা ভাষায় যুক্ত হয়েছে। কুরআন যেহেতু আররি ভাষায়, কুরআনের ভাষায় নামাজকে সালাত (صلاة) বলা বলা হয়েছে। সালাত এর আভিধানিক অর্থ দু’আ।

শরিয়তের পরিভাষায় “আল্লাহু আকবার” বলে নিয়ত বাঁধার পর কিছু আরকান ও শর্ত সাপেক্ষে কুরআন-হাদিস থেকে কিছু আয়াত ও সুনির্দিষ্ট দোয়া এবং নির্দেশিত কিছু নিয়ম ফলো করার পর “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে শেষ করা, এমন একটি বিশেষ ইবাদতকে সালাত বলা হয়।

নামাজের প্রকারভেদ

নামাজ মোটামুটি ভাবে ৪ টি ভাগে বিভক্ত; যথাঃ- (১) ফরজ নামাজ (২) ওয়াজিব নামাজ (৩) সুন্নত নামাজ (৪) নফল বা মোস্তাহাব নামাজ ইত্যাদি। এই নামাজ গুলোর মাঝে আরো কিছু শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে।

ফরজ নামাজ ২ প্রকার

  • ফরজে আইন
  • ফরজে কেফায়া

() ফরজে আইন নামাজ যা সবার উপরই আবশ্যকীয়। যেমনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। যা সবাইকে পড়তেই হবে।

(২) ফরজে কেফায়া নামাজ সবার উপরই আবশ্যকীয়, তবে এই নামাজ কিছু মুসলমান ভাই আদায় করলে সকল মুসলমানদের আদায়ের দায়িত্বটা পূর্ণ হয়ে যায়। যেমনঃ জানাজার নামাজ। তবে একজনও তা আদায় না করলে সকল মুসলমান গোনাহগার হবে।

ওয়াজিব নামাজ

ওয়াজিব নামাজ প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য আদায় করা অত্যাবশ্যক। এখানে কোন ছাড় নেই। যেমনঃ বিতর নামাজ এবং দুই ঈদের নামাজ। এই নামাজ গুলো আদায় না করলে সে শাস্তিযোগ্য অপরাধের শামিল হবে।

সুন্নত নামাজ ২ প্রকার

  • সুন্নতে মুয়াক্কাদা
  •  ‍সুন্নতে যায়েদা

() সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই সুন্নত নামাজের ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমনঃ ফজরের ২ রাকাত সুন্নত, যোহরের ফরজ নামাজের আগের ৪ রাকাত সুন্নত এবং পরের ২ রাকাত সুন্নত ইত্যাদি।

(২) সুন্নতে যায়েদা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কাজগুলো কখনো করতেন আবার কখনো করতেন না। এই সমস্ত কাজ করার জন্য উম্মতের উপরও নির্দেশ দেননি, তবে করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেনে।

সুন্নতে যায়েদা নামাজ যেমনঃ আসর এবং এশার ফরজ নামাজের আগের ৪ রাকাত করে সুন্নত। এই নামাজ পড়লে সওয়াব হবে তবে না পড়লে কেউ গোনাহগার হবে না।

নফল বা মোস্তাহাব

নফল বা মোস্তাহাব নামাজের জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোনো প্রকার ছাপ দেওয়া হয়নি। নফল বা মোস্তাহাব নামাজ এমন পড়লে অনেক সওয়াব পাবেন, তবে না পড়লে কোনো প্রকার গোনাহ হবে না। যেমনঃ এশরাক নামাজ বা চাশতের নামাজ ইত্যাদি।

নামাজ পড়ার নিয়ম

নামাজ পড়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যা প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের জন্যই এক ও অভিন্ন থাকে। শুধু নামাজের রাখতে কম-বেশী হয়। তবে বিতর নামাজের নিয়ম, ঈদের নামাজের নিয়ম এবং জানাজার নামাজের নিয়য় এর মাধ্যমে একটু ভিন্নতা দেখা যায়। এই ব্লগ থেকে আজ আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানবো। প্রথমেই জেনে নিই নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয়।

নামাজের নিয়ত

নামাজের নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনি কোন ওয়াক্তের নামাজ পড়বেন, কত রাকত নামাজ পড়বেন এই বিষয়ে আপনার মনে মনে একটি নিয়ত থাকতে হবে। অনেকেই মনে করেন যে, কিছু আরবি বাক্য মুখে উচ্চারণ করে নামাজের নিয়ত করতে হয়। নাহয় নামাজ হবে না। এটা ভুল।

আমরা যেহেতু বাংলা ভাষাভাষী, এক্ষেত্রে আমাদেরকে আরবি ভাষায় নামাজের নিয়ত জানতেই হবে বিষয়টা এমন নয়। বাংলাতেও নিয়ত করতে পারবেন। মনে রাখবেন, নিয়ত হলো অন্তরের বিষয়। অন্তরে যদি নিয়ত থাকে তবে মুখে কোনো বাক্য উচ্চারণ করার প্রয়োজন হয় না। আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, তিনি অন্তরের বিষয়কেই সবচেয়ে প্রাধান্য দেন।

নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?

  • তাকবিরে তাহরিমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করতে হবে।
  • নামাজ শুরু করার পর প্রথমেই সানা পাঠ করতে হবে।
  • সানা পাঠের পর সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
  • সূরা ফাতিহা পাঠের পর কিরাত পড়তে হবে। অর্থাৎ কুরআন মাজিদ থেকে যে কোনো সূরা বা সূরার আংশিক কিছু অংশ পাঠ করতে হবে।

এক্ষেত্রে আপনার কাছে কুরআনের যেই আয়াত সমূহ পড়তে সহজ মনে হয় এবং শুদ্ধরূপে পড়তে পারেন, সেই আয়াতগুলোই পড়বেন।

কিরাত পড়ার পরিমাণ হলো ছোট ছোট তিন আয়াত বা বড় এক আয়াত পাঠ করতে হবে।

অর্থাৎ, ছোট আয়াত বিশিষ্ট যদি কোনো আয়াত পাঠ করেন তবে আপনাকে কমপক্ষে ৩ আয়াত পাঠ করতে হবে। যেমনঃ সূরা কাউছার, এই সূরাটি ৩ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা। নামাজে এই সূরাটি কিরাত হিসেবে পাঠ করলে পুরোটাই পাঠ করতে হবে। ছোট আয়াত বিশিষ্ট প্রত্যেক সূরার জন্যই এই নিয়ম ফলো করুন।

আর যদি আয়াতুল কুরসি -এর মতো বড় আয়াত হয়, তবে একটি আয়াতকেই কিরাত হিসেবে পাঠ করতে পারবেন।

  • কিরাত পাঠ করার পর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে যাওয়ার পর ৩ বার / ৫ বার /৭ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম’ বলতে হবে।
  • তারপর ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা’ বলে রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে হবে এবং ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ এই বাক্যটি বলতে হবে।
  • তারপর ’আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় যাওয়ার পর ৩ বার / ৫ বার /৭ বার ‘সুবাহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ বলতে হবে।
  • অতঃপর ’আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা হয়ে বসতে হবে। বসার পর ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি ওয়ারহামনি ওয়াফিনি ওয়াহদিনি ওয়ারযুকনি পাঠ করতে হবে।
  • তারপর আবারো সিজদায় গিয়ে পর ৩ বার / ৫ বার /৭ বার ‘সুবাহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ পাঠ করতে হবে।
  • এরপর ’আল্লাহু আকবার’ বলে দাঁড়াতে হবে। (শুরু থেকে এই পর্যন্ত একটি রাকাত পূর্ণ হলো।) তারপর পূর্বের মতো সুরা ফাতিহা ও কিরাত পড়ে রুকু ও সিজদা যথাযথ ভাবে আদায় করতে হবে।
  • এভাবে দুই রাকাত পূর্ণ হওয়ার পর সোজা হয়ে বসতে হবে এবং আত-তাহিয়াতু পাঠ করতে হবে।

আপনার নামাজ যদি ২ রাকাত বিশিষ্ট হয়, তবে আপনাকে “আত-তাহিয়াতু…., আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা…, আল্লাহুম্মা বারিকালা…, এবং আল্লাহুম্মা ইন্নি যালামতু নাফসি…, ইত্যাদি দোয়াসমূহ পাঠ করে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রামমাতুল্লাহ” বলে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।

আর যদি আপনার নামাজ ৩ অথবা ৪ রাকাতের হয় তবে প্রথম দুই রাকাতের পর বসে আত-তাহিয়াতু…, পাঠ করে আল্লাহু আকবার বলে আবার দাঁড়িয়ে যেতে হবে এবং বাকি রাকাতগুলো যথা নিয়মে আদায় করতে হবে।

এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোঃ প্রত্যেক ফরজ নামাজের প্রথম ২ রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে কিরাত পাঠ করতে হয় এবং পরবর্তী রাকাত গুলোতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করে রুকুতে যেতে হয়। (এটা শুধু ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।)

ফরজ নামাজ ছাড়া সব নামাজেই প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে কিরাত পড়তে হবে। অর্থাৎ, আপনি যদি ওয়াজিব নামাজ, সুন্নত বা নফল নামাজ এই ধরণের যে কোনো নামাজই পড়েন না কেন, আপনাকে প্রতি রাকাতেই সূরা ফাতিহার সাথে কিরাত পড়তেই হবে।

উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো কেবল একাকী নামাজি বা ইমামের জন্য প্রযোজ্য। আপনি যদি একজন ইমামের পেছনে মুক্তাদি হয়ে নামাজ আদায় করেন, তবে এগুলোর সবকিছু আপনাকে ফলো করতে হবে না। আপনি তখন ইমামকেই ফলো করবেন।

গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু কথাঃ

সকল ইবাদতের মাঝে নামাজ হলো পরাক্রমশালী আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবচেয়ে সুগম পথ। আপনি যতবেশী নামাজ পড়বেন ততই আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হবে পারবেন। যদিও আমি ও আমরা অসলসতার জন্য নামাজের হক এবং পরাক্রশালী আল্লাহর হুকুম পালন করতে পারিনা! এটা আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য!!

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, নামাজ মানুষকে সকল প্রকার অন্যায়, ব্যবিচার থেকে বিরত রাখে। বর্তমান সমাজে অন্যায়, অবিচার লাগামহীন ভাবে বেড়েই চলছে। সমাজের এই পাপ রোধ করার জন্য একমাত্র পথ হলো নামাজ। আমরা যদি আমাদের পরিবারে, সমাজে, রাস্ট্রের প্রটিতি মানুষের মাঝে নামাজের দাওয়াত পৌঁছে দিতে পারি, এবং যদি নিজেরাও এর উপর আমল করতে পারি, তবে আমাদের সমাজের অন্যায়, ব্যাবিচার সবই অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

পরিশেষে মহান আল্লাহ আমাকে / আমাদেরকে / আমাদের প্রিয় সকল মুসলিম ভাই-বোনদেরকে ইসলামের ছায়াতলে আমাদের আবদ্ধ রাখুন। আমাদেরকে নামাজি হিসেবে কবুল করুন। নামাজ কায়েমকারী করুন। আমাদের সবাইকেই ক্ষমা করুন। আমিন!

আমি আশা করছি নামাজের প্রকারভেদ, নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে সকলেই সুস্পষ্ট একটি ধারণা পেয়েছেন।আপনার যদি কোনো পরামর্শ বা মতামত থাকে তবে এখনই কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন। জাযাকুমুল্লাহ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!