তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, ফজিলত ও সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত
Written by IQRA Bari

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম: নামাজ হলো ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ। মহান স্রষ্টা পরাক্রমশালী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নামাজ। নামাজের মাধ্যমে আমাদের মানসিক উন্নায়ন ঘটে। প্রকৃত নামাজি ব্যক্তিরা পাপমুক্ত, হতাশামুক্ত একটি আদর্শিক জীবন গঠন করতে পারে। পাশাপাশি স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনেও তারা বেশ এগিয়ে থাকে। সুতরাং আপনি যত বেশী নামাজ পড়বেন, তত বেশীই উপকৃত হবেন।

তাহাজ্জুদ কোনো ফরজ বা ওয়াজিব নামাজ নয়। তবে তাহাজ্জুদ এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ যা আপনাকে স্রষ্টার প্রিয় বান্দা হতে সাহায্য করবে। তাহাজ্জুদ নামাজ হলো সুন্নত। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবাদেরকে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য প্রচুর উৎসাহ দিয়েছেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ (تهجد‎‎) অর্থ ঘুম থেকে জাগা। অর্থাৎ, মধ্যরাতের পরে ঘুম থেকে জেগে যে নামাজ পড়া হয় তাকেই তাহাজ্জুদের নামাজ বলা হয়। তাহাজ্জুদের নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। কোরআন -হাদিসের আলোকে তাহাজ্জুদের নামাজের ব্যাপারে বেশকিছু তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।

কুরআনে বর্ণিত তাহাজ্জুদের নামাজ

তাহাজ্জুদের নামাজের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে প্রিয় নবী স. কে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ

আর রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কর তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থান-মাকামে মাহমুদে।’ (সুরা ৭ ইসরাঈল, আয়াত ৭৯)।

‘হে চাদর আবৃত!
রাতে দণ্ডায়মান হও কিছু অংশ বাদ দিয়ে; রাতের অর্ধেক কিংবা তারচেয়ে কিছুটা কম অথবা তার চেয়ে একটু বেশী। আর কোরআন আবৃত্তি করো সুবিন্যস্তভাবে এবং স্পষ্টভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয় ইবাদতের জন্য রাত্রিতে ওঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে তোমার জন্য দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। আর তুমি নিজ পালনকর্তার নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাতে নিমগ্ন হও।’ (সুরা ৭৩ মুজ্জাম্মিল, আয়াত: -৮)।

হাদিসে বর্ণিত তাহাজ্জুদের নামাজ

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বিভিন্ন হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে।

বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, ‘‘ফরয নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হল রাতের নামাজ। অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ’’ (সহিহ মুসলিম : ২৮২)

সুফীয়ানে কেরাম বলেন যে,  কোনো ব্যক্তি তাহাজ্জুদ ব্যতীত উচ্চ স্তরে পৌঁছতে পারে না। এরমধ্যে কোনো সন্দেহ নেই যে, এটা সমস্ত নেককার উম্মতের কাজ।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ’এশার নামাজের পরে’, সুন্নত হলো এই যে, এশার নামাজ পরে ঘুমিয়ে যাবে। তারপর ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বে। (ফাতাওয়া শামী, ইলমুল ফিকহ: ২/৪৩)

মাসআলা: তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সুবহে সাদিকের পূর্বেই হয়ে থাকে। (ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ: ৪/৩০৪, মেশকাতের: /০৫)

অন্য একটি হাদিস থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো অর্ধরাতে, কখনো তার কিছু পূর্বে, কখনো এর পরে তাহাজ্জুদের জন্য ঘুম থেকে জাগতেন। ঘুম থেকে জাগার পর একটি দু’আ পাঠ করতেন। দুআ পাঠের পরে উভয় হাত মুখের উপর বুলিয়ে দিতেন যাতে করে ঘুমের প্রতিক্রিয়া কেটে যায়। দুআ নিম্নরূপ-

বাংলা উচ্চারণঃ আলহামদুলিল্লাহিল্লাযি আহয়েনা  বা’আদামা আমাতানা অইলাইহিন্নুসূর।

বাংলা অর্থঃ “আল্লাহর শোকর যে তিনি আমাকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেছেন এবং ওখানেই সবাই প্রত্যাতর্তিত হবে”। এ ছাড়াও অন্যান্য দুআ রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নকল করা হয়েছে। (সিফরুস সাআদাত)

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাজ কমপক্ষে দুই রাকাত এবং সর্বোচ্চ দশ রাকাত পড়েছেন।

কিছু সংখ্যক ফেকাহর কিতাবে তাহাজ্জুদের নামাজকে আট বাকাতে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু হাদিস অনুসারে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশ রাকাতও পড়েছেন। সিফরুস সা’আদাহ গ্রন্থে দেহলবী রহ. এই বিষয়ে অনেক বিস্তারত আলোচনা করেছেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদের নামাজ অন্যান্য নামাজের মতই পড়তে হয়। প্রতি দুই রাকাত অন্তর অন্তর সালাম ফেরাতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই রাকাত করেই তাহাজ্জুদ নামাজের সালাম ফেরাতেন।

সবসময় তিনি দশ রাকাত পড়তেন না। কখনো দুই রাকাত, কখনো চার রাকাত, কখনো ছয় রাকাত, আবার কখনো আট -দশ রাকাত পড়তেন। আমাদেরকেও সেই নিয়ম অনুসারে পড়াই উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ

এই ব্লগটি যারা পড়ছেন, অবশ্যই আমরা সবাই বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। আরবি নিয়ত শিখতে আমাদের অনেকের কাছে কঠিন মনে হয়। একথাও সত্য যে, আরবি নিয়ত না জানলে নামাজ হবে না বিষয়টা এমনও নয়। যারা আরবি জানেন, তারা আরবিতে শিখে নেবেন। বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণে নিচে তুলো ধরা হলোঃ

বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছল্লি রাকাতাই ছলাতিত তাহাজ্জুদি সুন্নাতান্নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

বাংলা অর্থঃ ”আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সুন্নত দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেছি।

তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়

তাহাজ্জুদের নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়, এই বিষয়ে হাদিসে বিশেষ কোনো সূরার কথা উল্লেখ নেই। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাজের কিরাত লম্বা পড়তেন এবং রুকু সেজদাও লম্বা করতেন। তাই লম্বা কিরাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া উত্তম।

তাহাজ্জুদের নামাজে কিরাত উঁচু বা নিঁচু আওয়াজে পড়া জায়েজ। আপনার কিরাতের আওয়াজের জন্য যদি কারো ঘুমের সমস্যা হয়, তবে অবশ্যই কিরাত আস্তে পড়বেন। অর্থাৎ, আপনার জন্য কেউ যেনো কষ্ট অনুভব না করে।

শেষ কথাঃ

তাহাজ্জুদের নামাজ অনেক বরকতময় নামাজ। ইতোমধ্যেই জেনেছি ফরজ নামাজসমূহের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। এই নামাজের মাধ্যমে খুব সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। যদিও ঘুম থেকে উঠে এই নামাজ পড়তে কষ্ট হয়। তবে আপনার যদি সুযোগ থাকে তবে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে চেষ্টা করবেন।

আমি আশা করছি, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এবং তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত অনেক বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমাদের এই ইসলামিক পোস্ট গুলো আপানার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে অধিক ছওয়াবেব অংশীদার হোন। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন!

2 Comments

Leave a Comment

error: Content is protected !!